কাস্টমসের ২০ কেজি সোনা চুরির ঘটনায় ৫ কর্মকর্তা বহিষ্কার

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:২৬

বেনাপোল প্রতিনিধি

বেনাপোল কাস্টস হাউসের নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙে ২০ কেজি সোনা চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ভোল্ট ইনচার্জ শাহাবুল সর্দারসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। চুরির ঘটনায় কাস্টমস এর যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে নয় সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে চুরির ঘটনাটি ঘটলেও রাত ১০ টার দিকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী বিষয়টি স্বীকার করেন। আর রাত ১১ টায় কাস্টমস এর পক্ষ থেকে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

চুরি যাওয়া সোনার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। ডলার ও টাকা পয়সা খোয়া যায়নি বলে তদন্তে নিশ্চিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দুধর্ষ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে পোর্টথানাসহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই ঘটনাস্থলে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রুবার, শনিবার ও রবিবার ঈদে মিলাদুন্নবির সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। সোমবার সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে।

কাস্টমস’র এর ডেপুটি কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোপনীয় একটি কক্ষের তালা ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। সেই কক্ষে রক্ষিত লোহার ভোল্ট ভেঙে ২০ কেজি সোনা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভোল্টে মূল্যবান আরো বিপুল পরিমাণ সোনা, ডলার ও টাকা ভোল্টে থাকলেও শুধু মাত্র ২০ কেজি সোনা নিয়ে যায় তারা। ভোল্ট ভাঙার আগে  দুর্বৃত্তরা সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে।

ভোল্টে কাস্টম, কাস্টম শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধার করা সোনা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ মূল্যবান দলিলাদি ছিল।

সূত্র জানায়, সোমবার সকালে ওই ভোল্টের তালা ভাঙা দেখে চুরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন কাস্টম কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে কাস্টমের কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। তারপর ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিবি, সিআইডি, পিবিআই,  রেব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই ভোল্ট রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে হাত-পায়ের ছাপ সহ আলামত সংগ্রহ করা হয়। আলামত সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিএসবির এএসপি তৌহিদুল ইসলাম, ইনসপেক্টর সৈয়দ মামুন হোসেন, র‌্যাব জেলা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, এআরও জিএম আশরাফ, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান প্রমুখ। তারা যৌথভাবে সুরতহাল করেন।

সূত্র জানায়, কাস্টমস হাউসের বেশ কিছু বহিরাগত (এনজিও) বিভিন্ন শাখায় অবৈধভাবে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের মধ্যে ক্যাশ শাখার দায়িত্বে থাকা এনজিও টিপু এ ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ জানায়। টিপু বর্তমানে পুলিশী হেফাজতে রয়েছে বলে জানানো হয়। 

কাস্টম হাউসে সিসি ক্যামেরায় সুরক্ষিত একটি সংরক্ষিত এলাকায় কীভাবে এ ধরনের দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সব মহলে। যেখানে কাস্টম হাউজে নিজস্ব সিপাইসহ আনসার ব্যাটালিয়নের একটি ইউনিটও নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খান বলেন, ‘বেনাপোল কাস্টমের ভোল্টে বিকল্প চাবি ব্যবহার করে সোনা চুরি  করা হয়েছে। এখানে পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ সিআইডি ও পিবিআই কর্মকর্তারা তদন্তকাজ চালাচ্ছেন। আশা করা যায় দ্রুতই দুর্বৃত্তদের আটক করা সম্ভব হবে।

ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/ইএস