বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি সংসদে

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। নারী শ্রমিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এ দাবি জানান তারা।

আজ মঙ্গলবার বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এ-সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুলতান মনসুর আহমেদ।

সুলতান মনসুর আহমেদ নারীর বদলে পুরুষ শ্রমিক পাঠানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, তাহলে বেশি আয়ের পাশাপাশি আমাদের মান-ইজ্জতও বাঁচবে। পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর থাকবে। দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। না হলে আমরা দাসত্বের বাংলাদেশে পরিণত হব।’

জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন,  সৌদি আরব, মালয়েশিয়া- যেখানেই বলেন, শ্রমবাজার অনুযায়ী তারা যেভাবে চায় সেই হিসাবে শ্রমিক পাঠাতে হবে। আর না হলে পাঠানোর দরকার নেই।  আমরা চেষ্টা করব নারী শ্রমিকরা যেন সম্মানজনভাবে ওখানে চাকরি করতে পারেন। আর যদি একেবারেই না করতে পারে তাহলে দেখব, চিন্তা করব না পাঠাতে।’

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সৌদি আরবে বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে অনেক নারী কর্মী সুযোগ পেলে পালিয়ে যাচ্ছে, জেলখানায় যায় এবং অনেক কিছু হচ্ছে। এ জন্য বহির্বিশ্বে থেকে আমাদের অনেক প্রশ্ন আসছে। মাননীয় মন্ত্রীদের কাছে আমার প্রশ্ন- নারী কর্মীদের যৌন হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য, তাদের ইজ্জত-সম্মানের সাথে চাকরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?’

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমাদের মা-বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওখান থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে, নানা রকম অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়ে তারা লাশ হয়ে ফিরে আসে। এ যাবৎ ছয় থেকে সাত শ লাশ এসেছে এবং তাদের সবারই লেখা থাকে- এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয় সেটাও বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি দেখে না। একই রকমের পোস্টমর্টেম করে তারা।’

‘এভাবে আমাদের মা-বোনদের নিয়ে ব্যবসা করতে পারি না। এটা স্বাধীন দেশ। আমাদের সম্মান আছে। ইজ্জত আছে। মাত্র কয়েকটি টাকার জন্য আমরা এ কাজ করতে পারি না। আমাদের দেশটা এখন আর অত গরিব না। আমরা তো তলাবিহীন ঝুড়ি না। কেন মহিলা পাঠাতে হবে? বন্ধ করুন অবিলম্বে।’

মন্ত্রীর উদ্দেশে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘দেখেন না একেকজন মহিলা ফিরে আসে আর তাদের কীভাবে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়? আপনাদের ঘরে মা-বোন নাই? কেন আমরা কয়েকটা টাকার জন্য ওদের পাঠাব?  মহিলাদের পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।’

বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা হবে কি না প্রশ্ন করে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এই টাকা আমাদের প্রয়োজন নাই। মা-বোনদের পাঠিয়ে দিয়ে দেশ বিক্রি করার টাকার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের ইজ্জত বিক্রি করতে পারি না।’

এসব প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আপনারা যতটা চিন্তিত, আমরা এর চেয়ে বেশি চিন্তিত।’

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/মোআ)