ঢাবির হলে নিয়ম ভেঙে সিট দেয়ার অভিযোগ

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০১ | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার দা সূর্যসেন হলে সিট বরাদ্দ করতে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে এক আবাসিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্বজনপ্রীতি করে সিট দিতে গিয়েই নিয়ম ভঙ্গ করেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এতে ক্ষুব্ধ হলের অন্যান্য আবাসিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত ওই আবাসিক শিক্ষকের নাম সামসুল করীম। তিনি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের আরবি ভাষার প্রভাষক। তিনি সূর্যসেন হলের ৩৩৮ থেকে ৩৭৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বরত।

জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর সূর্যসেন হলের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কক্ষে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী, সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সিনিয়রিটি ও একাডেমিক রেজাল্ট বিবেচনা করা হয়।

এক্ষেত্রে আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা পছন্দের কক্ষ উল্লেখ করে আবেদন করেন। আবেদনকৃত এসব কক্ষে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বরাদ্দ দেয়া হয়। সিট বরাদ্দের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই কমিটি আবাসিক শিক্ষকদের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে।

হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩৬৭ নম্বর কক্ষে দুজন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। যাদের একজন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত রেজাউল করিম। যার এসএসি ও এইচএসসি দুটি পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫। এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০ এর অধিক।

অপরদিকে আবেদনকারী অন্য শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিস বিভাগের তরিকুল সরকার। যার এসএসসি ও এইচএসসির কোনো রেজাল্টেই জিপিএ-৫ নেই। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের একাডেমিক পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু বরাদ্দকৃত ছাত্রদের তালিকায় দেখা যায়, ৩৬৭ নম্বর কক্ষটিতে কাউকে বরাদ্দ না দিয়ে প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে দ্বৈতাবাসিক দেয়া হয়। যেখানে সিনিয়রিটি ও ফলাফল বিবেচনা করলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেয়ার কথা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গ্রামের বাড়ি ভিন্ন হলেও আবাসিক শিক্ষক ও প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থী দুজনের মধ্যে একটা বিশেষ সখ্য ছিল। যার কারণে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ম ভঙ্গ করে দ্বৈতাবাসিক দেয়া হয়। যেখানে হলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে সিট বরাদ্দ বা দ্বৈতাবাসিক দেয়া হয়নি। সেখানে বিশেষ সখ্য না থাকলে তিনি প্রথম বর্ষের হয়ে কীভাবে দ্বৈতাবাসিক পেলেন?

স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করায় ওই শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ একাধিক আবাসিক শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, সিট বরাদ্দের জন্য হলে একটি কমিটি আছে। যাদের সুপারিশেই সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেধাবী, ফলাফলে এগিয়ে এবং আর্থিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমরা সিট বরাদ্দ দেই। কিন্তু এই শিক্ষক নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে সিট দিয়েছেন। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক কথাকাটাকাটিও হয়েছে।

এছাড়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। ওই ব্লকে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সামসুল স্যার যে আমাদের এই ব্লকের আবাসিক শিক্ষক আমরা সেটা জানিই না। অথচ গত এক বছরেরও বেশি সময় আমি এই ব্লকে অবস্থান করছি।

পরবর্তী সময়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিষয়টি শিক্ষকদের অবহিত করলে ওই শিক্ষার্থীকে এই কক্ষে সিট বরাদ্দ দেন শিক্ষকরা। কিন্তু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর দ্বৈতাবাসিক বাতিল করা হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ওই কক্ষটি একজনের জন্য তৈরি করা হলেও কক্ষটিতে আগে থেকে গাদাগাদি করে তিনজন অবস্থান করছে। যাদের বাকি দুজন দ্বৈতাবাসিক। কিন্তু বর্তমানে নতুন একজনকে দ্বৈতাবাসিক করায় এখন একজনের কক্ষে চারজন থাকতে হবে। যা জেলখানার মতো পরিস্থিতির তৈরি করবে।

নিয়ম ভঙ্গ করে কেন ওই শিক্ষার্থীকে ওই কক্ষে বরাদ্দ দেয়া হল তা জানতে চাইলে ওই ব্লকের হাউজ টিউটর সামসুল করীম কিছু বলতে রাজি হয়নি । তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ নিয়ে কাল মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়াকে ফোন দেওয়া হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/এমআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :