সাগর-মরুর প্রণয়, পৃথিবীর মঙ্গল ‘নামিব’

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:২৮

আবুল কাশেম, ঢাকা টাইমস

পৃথিবীর একটি জায়গায় সমুদ্র ও মরুভূমি মিশে একাকার হয়ে গেছে। সেটি হলো নামিব মরুভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এই মরুভূমির বয়স প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত লাল বালুর বিশাল এই মরুভূমি। আটলান্টিক মহাসাগরের কোলে অবস্থিতি এই মরুভূমি নামিবিয়া, অ্যাঙ্গোলা ও দক্ষিণ আফ্রিকার অংশ। ৮১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই মরুভূমি ২০০ কিলোমিটার চওড়া এবং দুই হাজার কিলোমিটার লম্বা।

এই মরুভূমিতে দিনের বেলা থাকে সূর্যের জ্বলন্ত আগুন, রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা। লাল বালুর বিশাল অঞ্চলে কোনো পানির চিহ্নমাত্র নেই। একদিকে আটলান্টিক মহাসাগর অপরদিকে এই বিশাল মরুভূমি। যেন মনে হয় মহাসাগরের সঙ্গে গভীর প্রণয়ে মিশেছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এই মরুভূমি। লাল বালুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কারণে এটিকে বলা হয় পৃথিবীর মঙ্গল।

নামিব মরুভূমিতে বার্ষিক ২ মিলিমিটার বা ০.০৭৯ ইঞ্চি থেকে ২০০ মিলিমিটার বা ৭.৯ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। প্রায় ৫৫-৮০ মিলিয়ন বছর ধরে শুষ্ক বা আধা-শুষ্ক অবস্থা সহ্য করা নামিবকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মরুভূমি বলা হয়। এটি বিশ্বের কয়েকটি শুষ্ক অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমা দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা মরুভূমির সঙ্গে বয়স, শুষ্কতা এবং ভূপ্রকৃতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

মরুভূমিটি উপকূলের কাছে বালি সাগর নিয়ে গঠিত। এর নুড়িপাথর, মৃত্তিকা ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ের তৃণ বা বৃক্ষ আচ্ছাদনগুলি এটিকে এক স্বতন্ত্র রূপ দান করেছে। বালিয়াড়িগুলি ৩০০ মিটার বা ৯৮০ ফুটের মতো উঁচু এবং ৩২ কিলোমিটার বা ২০ মাইল দীর্ঘ।

উত্তরাঞ্চলের ওভায়িমবা ও ওবাজিমবা হেরেরো এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে টপনার নামাসহ বেশ কয়েকটি ছোট বসতি এবং আদিবাসী পশুচারী গোষ্ঠী ছাড়া নামিব প্রায় সম্পূর্ণভাবে মানব বসতিহীন মরুভূমি। মরুভূমিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক প্রজাতি পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগ স্থানীয় এলাকার নির্দিষ্ট জলবায়ুতে রূপান্তরিত এবং অত্যন্ত উপযোগী। নামিব-নউক্লুফ্ট জাতীয় উদ্যান, আফ্রিকার বৃহত্তম ক্রীড়া পার্ক, আফ্রিকান বুশ এলিফ্যান্টস, মাউন্টেন জেব্রাস এবং অন্যান্য বড় স্তন্যপায়ীদের জনবসতি রয়েছে এখানে। নামিব-এর বেশিরভাগ গাছপালা অত্যন্ত শুষ্ক জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে সক্ষম।

নামিবে বাস করা প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে- উট পাখি, গেম্সবক বা অরিক্স জাতীয় হরিণ, নামাকোয়া গিরগিটি, লম্বা ঠ্যাংওয়ালা পিঁপড়া, নামিব স্যান্ড গেকো বা বালিয়াড়ির টিকটিকি, বালিয়াড়ির কাঁকড়া বিছে ইত্যাদি।

সূর্যের তাপে মহাসাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে মরুভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নিয়মিত কুয়াশা পড়ে। দুর্গম এই মরুভূমিতে বাস করা বেশিরভাগ প্রাণী এই কুয়াশা থেকেই পানির চাহিদা মেটানোর কৌশল রপ্ত করেছে। এই অসাধারণ কৌশলের ফলেই তারা মরুভূমিতে টিকে রয়েছে।

বর্তমান পৃথিবীর দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। মরুভূমিগুলো ক্রমশ বৃহৎ এবং অধিকতর উত্তপ্ত ও শুষ্ক হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে এখানকার প্রাণীদের টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

ঢাকা টাইমস/১৩নভেম্বর/একে