রাজনীতির চেয়ে সাংবাদিকতাই আপনার বড় পরিচয়

রেজাউল করিম
 | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২৫

আরিফুর রহমান দোলন। দৈনিক ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়ের সম্পাদক। আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে অন্যতম। নিউজ পোর্টাল হিসেবে যখন ঢাকাটাইমস যাত্রা শুরু করে তখন থেকেই ঢাকাটাইমসের একজন কর্মী হিসেবে সম্পাদকের সঙ্গে পরিচয়।

তৎকালীন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ‘লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে কানাঘুষা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় মন্ত্রী ঢাকাটাইমস সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুটি মানহানি মামলা করেন। একটি মামলা টাঙ্গাইলে হওয়ায় সম্পাদককে অনেকবার টাঙ্গাইলের আদালতে আসতে হয়েছে। এজন্য সম্পাদকের কাছে যাওয়া সুযোগ হয়। কাছ থেকে তাকে দেখেছি। ছোট ভাই হিসেবে আদর পেয়েছি। জেনেছি তার অতীত। জেনেছি তার ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো।

‘প্রথম আলো’, ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ ও আমাদের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে থাকাকালীন তার লেখনীতে সমাজের নানা অসঙ্গতি উঠে এসেছে। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক থাকাকালে প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রধান শিরোনামে দেখা যেতো আরিফুর রহমানের প্রতিবেদন।

রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পেছনে ছুটতেন তিনি। রাজনৈতিক গডফাদার থেকে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের মুখোশ খুলেছেন। বাংলা ভাই থেকে শুরু করে সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গিবাদের অনুসন্ধান করতে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন জেলায় জেলায়। ঝুঁকি নিয়ে পথ চলেছেন। সাংবাদিকতায় তবুও পেছনে ফেরেননি। নিরপেক্ষতায় রয়েছে তার বিশেষ গুণ। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বেশ কয়েবার পুরস্কার পেয়েছেন।

একসময় ছাত্র রাজনীতি করতেন। তখন আমাদের ক্ষতি হয়নি। যখন রাজনীতির সঙ্গে পুরোদমে জড়িয়ে পড়লেন তখন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালীতে (ফরিদপুর-১) আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে নাম লেখালেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন। সম্পাদকের ব্যস্ততা বাড়লো।

সংবাদকর্মী হিসেবে আপনার কাছে আমাদের যতোটা সময় পাওয়ার কথা আমরা তা পাইনি। আপনি আপনার সুন্দর ক্যারিয়ার ফেলে মানুষকে ভালোবাসতে জন্মভূমিতে ছুটে গেছেন। জন্মস্থানে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে শরিক হলেন। অথচ আমাদের বঞ্চিত করলেন কাছে থাকা থেকে। আপনাকে বলতেই হবে রাজনীতিতে কি পেলেন প্রিয় সম্পাদক?

আপনি দৈনিক ‘ঢাকা টাইমস’ ও সাপ্তাহিক ‘এই সময়’-এর সম্পাদক। আপনার অতীত বর্ণাঢ্য কর্মপরিচিতি রয়েছে। চলমান উন্নয়নমূলক কাজের প্রমাণ রয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রকাশনা সংস্থা এই সময় পাবলিকেশন্স। শুরু করেছেন ব্যবসা। সঙ্গে রয়েছে সম্মান, আত্মমর্যাদা আর ভালো কাজের জন্য দোয়া। আর কি প্রয়োজন আপনার?

প্রিয় সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষক লীগের নতুন কমিটিতে নতুন করে সহ-সভাপতি হবেন না। নতুন কমিটিতে থাকতে ইচ্ছুকদের কাছে সিভি (জীবনবৃত্তান্ত) চেয়েছিলেন নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। আরিফুর রহমান দোলন আগ্রহ দেখাননি। তার এই সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশি।

আমি বা আমরা চাই আপনি আমাদের সময় দেন। আমাদের প্রিয় ঢাকাটাইমস ও এই-সময়কে সময় দেন। আপনার সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ড থাক অব্যাহত। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যতোটুকু উন্নয়নমূলক কাজ করে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে দেখেছি আপনাকে। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি। ভাবতে দেখেছি অন্যের জন্য। অথচ কি পেলেন? আমি জানি আপনি প্রাপ্তিতে বিশ্বাসি নন। কারও জন্য কিছু করতে পারাটাই আপনার আকাঙক্ষা।

একজন রাজনীতিবিদের চেয়ে সমাজে আপনার অবস্থান অনেক ওপরে। সমাজ যেদিন পরিবর্তন হবে আপনি সেদিন সমাজ পরিচালনা করবেন। দেশ আপনাকে চেনে। এই পরিচিতি আপনাকে রাজনীতি এনে দেয়নি। এনে দিয়েছে সাংবাদিকতায়। নেতা হিসেবে আপনাকে টক-শোতে দেখিনি। সম্পাদক হিসেবে টিভির পর্দায় প্রায়ই দেখি। নিরপেক্ষ কথা বলায় কোনো টক-শো মিস করিনি।

প্রিয় সম্পাদক, রাজনীতির চেয়ে সাংবাদিকতাই আপনার বড় পরিচয়। রাজনীতি করুন। তবে প্রাধান্য দিন সাংবাদিকতাকে। আমরা যে আপনার কাছে নীতি নৈতিকতা আর সাংবাদিকতা শিখতে চাই।

শুভকামনায়: রেজাউল করিম

একজন সংবাদকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :