পেঁয়াজের দাম ২০০ পেরিয়ে সর্বকালের রেকর্ড

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে দুই শতকের ঘর ছাড়িয়েছে। বাজার থেকে রান্নাঘর এক পেঁয়াজেই অসহায় সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যটির দর নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় অভিযান, বড় শিল্প গ্রুপের পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা, বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও দাম কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বৃহস্পতিবার এক দিনেই এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা।

গত দেড় মাস ধরে দেশের পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন। আড়তদাররা আমদানিকারকদের দোষারোপ আর আমদানিকারকরা অদ্ভুত সব অজুহাত দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। আর তাদের মাঝখানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংসদেও পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটা বাজার ঘুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকার বেশি দেখা গেছে। অসহায় ক্রেতারা চড়া দামেই স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে ঘরে ফিরছেন।

এবারের পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সকালের দামের সঙ্গে বিকালের দামের আকাশ-পাতাল তফাত। রামপুরার কামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার সকালে ১৬০ টাকা দাম দেখে অল্পকিছু পেঁয়াজ কিনেছিলেন। বিকালে গিয়ে শোনেন ২২০ টাকা কেজি। একই তথ্য জানা গেছে ঢাকার কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল বাজারে। সেখানে পেঁয়াজের দামে সকাল-বিকালের তফাত ছিল প্রায় ৫০ টাকা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের এমন উচ্চমূল্য দেখা যায়নি। সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, পেঁয়াজের এমন দাম কোনোদিন কল্পনাও করেননি তিনি।

আর সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তার জানামতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়ায়নি।

নিকট অতীতে ২০১৭ সালে একবার পেঁয়াজের দাম ১৫০ হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়।

পেঁয়াজের বর্তমান উচ্চমূল্যের জন্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে  বাজারের সরবরাহ কম। তবে খুচরা বাজারে অন্য সময়ের চেয়ে কিছু কম হলেও পেঁয়াজের খুব বেশি ঘাটতি নেয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা আসলে নিরুপায়। পাইকার আর আড়তেই দাম নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা খুচরা পর্যায়ে সামান্য লাভে বিক্রি করেন।

এদিকে দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকার মতো। বন্দরনগরীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দোকানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। আর নগরের বাইরের এলাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

খাতুনগঞ্জের কোনো আড়তে গতকাল ভারতের পেঁয়াজ দেখা যায়নি। মিয়ানমারের ভালোমানের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মাঝারি মানের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে সদ্য আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজ নেই। চাহিদার তুলনায় আমদানি খুবই সামান্য। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ বড় অঙ্কের পেঁয়াজ আমদানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। সেই পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসেনি। সেটা না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটা আমরাও বলতে পারছি না।’

খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের মালিক বলাই কুমার পোদ্দার জানান, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। তবে এক দিনে দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে মিসর, চীন, পাকিস্তানের পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। তবে এসব পেঁয়াজের চাহিদা তেমন নেই বলে ভাষ্য এই ব্যবসায়ীর।

এদিকে খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও বাজারে ১৫ থেকে ২০ ট্রাকের বেশি ঢুকছে না বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর যুক্তি দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে আকস্মিকভাবে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপরই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। সেসময় দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম ছিল প্রতি কেজি পেঁয়াজের। লাফে লাফে বেড়ে সেই পেঁয়াজ শতক পার হলে টনক নড়ে প্রশাসনের।

এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজার, আমদানিকারকের আড়তে অভিযান শুরু করে। কয়েক দফা বৈঠকও হয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের নিয়ে। তবে তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তার মধ্যেই দেশের বৃহৎ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়। এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়া হয়। আরও চারটি শিল্প গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করছে বলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তথ্য দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৩০ টনের। এর বিপরীতে এসেছে মাত্র চার হাজার ৮১৫ টন। ঘোষণার পরও যথাসময়ে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ বাজারে না আসায় দাম বাড়ার আরেকটি কারণ বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বড় গ্রুপ যখন আমদানির ঘোষণা দিয়েছে ছোট আমদানিকারকরা তখন আর এলসি খোলেনি। আর এসব পেঁয়াজ বাজারে না ঢুকলে পেঁয়াজের দাম পড়বে না।

ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/ডিএম