সেরা করদাতা কার্ড পেল ১৪২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:১২ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সেরা করদাতা হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি ট্যাক্স কার্ড বা কর কার্ড দিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয়ভাবে এবার ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৪টি, কোম্পানি পর্যায়ে ৫৭টি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০টিসহ মোট ১৪২টি ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও জেলা থেকে তিন জন সর্বোচ্চ করদাতা, দুজন দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী এবং একজন করে নারী ও তরুণ করদাতাকে মনোনীত করা হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীর ভিত্তিতে তালিকাটি করা হয়েছে। 

ঢাকায় জাতীয়ভাবে ১৪২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে কর কার্ড ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু হোটেলে। আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথি হিসেবে ট্যাক্স কার্ড তুলে দেন  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সচিব অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া । অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন  প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি (এমপি) আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা  উন্নত ২০টি দেশের মধ্যে থাকবো।  ট্যাক্সের রেট কমানো হবে। আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি আমরা ট্যাক্সের রেট কমাবো। তবে করের আওতা বাড়ানো হবে ( ট্যাক্স নেট)।  আমরা শিগগীর একটা কমিটি করবো সেখানে দেখবো কিভাবে তিন লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অর্জন করা যায়। আমরা করের লক্ষমাত্রা কখনও  কমাবো না।

যারা ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন:

জ্যেষ্ঠ নাগরিক: এই শ্রেণিতে আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, খন্দকার বদরুল হাসান, রাজশাহী কর অঞ্চলের অনিতা চৌধুরী, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১–এর আলীহোসাইন আকবরআলী ও ঢাকা কর অঞ্চলের মোস্তাফিজুর রহমান।

গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: লে. জেনারেল (অব.) আবু সালেহ মো. নাসিম, এস এম আবদুল ওয়াহাব ও কুমিল্লার আল মামুন সরকার।

প্রতিবন্ধী: চট্টগ্রামের সুকর্ণ ঘোষ, ঢাকার আকরাম মাহমুদ ও সিলেটের মামুনুর রশিদ।

নারী: ঢাকার রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, পাবনার রত্না পাত্র ও মাহমুদা আলী শিকদার।

তরুণ: নাফিস সিকদার, গাজী গোলাম মর্তুজা, মেহেদী হাসান, আবু রায়হান রুবেল ও জুলফিকার হোসেন মাসুদ রানা।

ব্যবসায়ী: ঢাকার মো. কাউছ মিয়া, সৈয়দ আবুল হোসেন, কামরুল আশরাফ খান, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামাল ও ঢাকার আসলাম সেরনিয়াবাত।

বেতনভোগী শ্রেণির পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইউসুফ, খাজা তাজমহল ও এম এ হায়দার হোসেন। অন্যরা হলেন ইনসেপটা ফার্মার আব্দুল মুক্তাদির এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা।

ডাক্তার: সেরা পাঁচ করদাতা হলেন এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, এম এ এম মোমেনুজ্জামান, নার্গিস ফাতেমা ও শামসুল আরেফিন।

সাংবদিক :

মাহ্ফুজ আনাম , মোহাম্মদ আবদুল মালেক , মতিউর রহমান, শাইখ সিরাজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল।

আইনজীবী: এই শ্রেণির সবাই কর অঞ্চল ৮-এর। তালিকায় আছেন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, নিহাদ কবির, আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক।

প্রকৌশলী: ঢাকার রেজাউল করিম, শাহ মোহাম্মদ হান্নান ও চট্টগ্রামের এস এম আবু সুফিয়ান। স্থপতি শ্রেণিতে ফয়েজ উল্লাহ, রফিক আজম ও গোলাম আজম সিজার।

হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউনট্যান্ট): ঢাকার মোক্তার হোসেন, মনজুরুল আলম ও মোহাম্মদ ফারুক।

নতুন করদাতা হিসেবে সেরা হলেন ঢাকার মতিউর রহমান, সিলেটের সৈয়দা জমিলা বেগম, মিরাজুল ইসলাম, ঢাকার হোসনে নুজহাত, নারগিছ আকতার, মিয়া মো. রেজুয়ান কবির ও সোনিয়া সারহা পিংকি।

খেলোয়াড় শ্রেণিতে আছেন তিন ক্রিকেটার। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। অভিনেতা-অভিনেত্রী: আনিসুল ইসলাম হিরু, ফরিদা আক্তার ববিতা ও সাকিব খান।

গায়ক-গায়িকা: তাহসান রহমান খান, এস ডি রুবেল ও মমতাজ বেগম।

অন্যান্য শ্রেণিতে নাম আছে শওকত আলী চৌধুরী, আকতার মতিন চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম মজুমদার।

কোম্পানি পর্যায়ে সেরা

ব্যাংকিং ক্যাটাগরি: ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এইচএসবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইউসিবিএল।

নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.৮ মোতাবেক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরীতে এক জন, অন্যান্যা ক্যাটাগরীতে এক জন এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরিতে দুই জন যোগ্য করদাতা না থাকায় সম্মিলিত তালিকা থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে ব্রাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক।

অব্যাংকিং আর্থিক: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড।

টেলিকমিউনিকেশন: গ্রামীনফোন লিমিটেড

প্রকৌশল: বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, খুলনা শিপইয়ার্ড ও বিএসআরএম স্টিলস।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।

জ্বালানি: তিতাস গ্যাস, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (জিটিসিএল)।

পাটশিল্প: আকিজ জুট মিলস, জনতা জুট মিলস ও সুপার জুট মিলস।

স্পিনিং ও টেক্সটাইল: কোটস বাংলাদেশ, বাদশা টেক্সটাইলস, এ সি এস টেক্সটাইলস, নোমান টেরিটাওয়েল মিলস, অ্যাপেক্স টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল ও ফখরুদ্দীন টেক্সটাইল মিলস।

ওষুধ ও রসায়ন: ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনাটা লিমিটেড।

প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়াস্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড ও মিডিয়া ওয়ার্ল্ড।

আবাসন: র‌্যাংগস  প্রপার্টিজ, ইকুইটি প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও বে ডেভেলপমেন্টস।

তৈরি পোশাক: ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার, রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, হা-মীম ডেনিম, দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার, প্যাসিফিক জিনস ও ফোর এইচ ফ্যাশন।

চামড়াশিল্প: বাটা সু, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও এটলাস ফুটওয়্যার।

অন্যান্য শ্রেণিতে আরও আছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স, সাধারণ বীমা করপোরেশন, তমা কনস্ট্রাকশন, এস এন করপোরেশন, মেসার্স এ এস বি এস, মেসার্স ছালেহ আহম্মদ, ঢাকার ভাটারার ওয়ালটন প্লাজা, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, মোংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, বেসরকারি সংস্থা আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ ও আর এস ট্রেডিং।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরি: বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

ট্যাক্স কার্ডের মেয়াদ থাকবে এক বছর। কার্ড প্রাপ্তরা বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবে। সংশোধিত জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা ২০১০ অনুসারে এসব কার্ড দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ট্যাক্স কার্ডধারীরা বিভিন্ন রাষ্টীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। সড়ক, বিমান, নদীপথে ভ্রমণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। হোটেল-রেস্তরায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পাবেন। বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারী ব্যাক্তি ও তার পরিবার চিকিৎসায় হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শয্যা সুবিধা পাবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/জেআর)