স্বেচ্ছাসেবক লীগে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১২:২১ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন শনিবার। সাত বছর পর সংগঠনটিতে আসছে নতুন নেতৃত্ব। দলে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা শেষ মূহূর্তে দৌড়ঝাঁপ করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে।দলের দুঃসময়ে নিজেদের অবদানের কথা তুলে ধরছেন নেতাদের কাছে।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার করার পর থেকে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে এক ডজনের মতো নেতা বিভিন্ন পর্যায়ে জোর তদবির চালাচ্ছেন। নিজেদের যোগ্য প্রমাণে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন। দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দলের নীতিনির্ধারকদের।

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের জন্ম ১৯৯৪ সালে। এরপর আহ্বায়ক কমিটি পার করে দেয় নয় বছর। ২০০৩ সালে প্রথম কমিটি হয় সংগঠনটির। ওই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। এর নয় বছর পর ২০১২ সালে হয় দ্বিতীয় কমিটি। দ্বিতীয় সম্মেলনে সভাপতি করা হয় মোল্লা মো. আবু কাওছার এবং সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। এরপর সাত বছর পর ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংগঠনটির তৃতীয় সম্মেলন।

সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্মল চন্দ্র গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাহউল সাচ্চুকে।

সাত বছর পর হতে যাওয়া সম্মেলনে সভাপতি পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, মতিউর রহমান মতি, আফজালুর রহমান বাবু, নির্মল চ্যাটার্জি, কাজী শহীদুল্লাহ লিটন।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আজিম, আব্দুল আলিম, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, দপ্তর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল রাজু।

আলোচনায় থাকা এসব নেতাদের মধ্যেই দুইজনকে শীর্ষ দুই পদে বসানো হবে। তবে ক্যাসিনোকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেতাদের কারও কমিটিতে ঠাঁই হবে না বলে সংগঠনটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভালো নেতা নির্বাচিত করা হবে। যিনি বির্তকের ঊর্দ্ধে, যার ক্লিন ইমেজ রয়েছে, যিনি দস্যু না, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী এবং মাদকসেবী না। দুঃসময়ের পরীক্ষিত জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন উপেক্ষা করে দলের রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বির্নিমাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার পেছনে থেকে কাজ করছে তাদের ভেতর থেকে দেশপ্রেমিক নেতা নির্বাচিত করা হবে।’

সংগঠনটির সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশের কর্মীদের একটা মিলন মেলা হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে যেটা এই সংগঠনকে সুসংগঠিত করে আগামী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১, ২০৪১ এবং ২১০০ ভিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ হবে তার ভ্যানগার্ড।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চান খায়রুল হাসান জুয়েল। বর্তমানে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসা জুয়েল দলের জন্য বিভিন্ন সময় অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কারামুক্তির জন্য জেলেও খেটেছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী জুয়েল বলেন, ‘ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এক-এগারোতে নেত্রীর কারামুক্তির আন্দোলনে এক বছর জেলে থেকেছি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বারবার হামলার শিকার হয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। সততা স্বচ্ছতা কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সবসময় নিয়োজিত রেখেছি।’

জুয়েল আরও বলেন, ‘দুঃসময়ে যারা সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং সারাদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্বে আসলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ ভালোভাবে চলবে বলে আমি মনে করি।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘একটা চমৎকার সম্মেলন হবে বলে আমরা আশা করছি। সম্মেলনের মাধ্যমে একটা ভালো নেতৃত্ব আসবে।’

তিনি বলেন, আমি এই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি। আমি ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলাম। একএগারোর সময় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। এই সংগঠনের দুঃসময়ে আমাদের প্রিয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম (সাবেক সভাপতি) যখন যা নির্দেশ দিয়েছিলেন সব কাজই করেছি।

সহ-সভাপতি আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের আপা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটার সঙ্গে আমরা একমত। আমরা বিশ্বাস করি দীর্ঘদিন ধরে যারা কাজ করছে মানুষের জন্য এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ যে ইমেজবহুল একটা সংগঠন ঠিক রাখার জন্য যে নেতৃত্ব দেবেন তার মাধ্যমে আমরা কাজ করব।’

ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/টিএ/এমআর