চট্টগ্রামে খালে-নদীতে টন টন পচা পেঁয়াজ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২৯ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৩২

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

বাজারে সংকট সৃষ্টি করার জন্য গুদামে মজুদ করা পেঁয়াজে এখন পচন ধরছে। এমন অন্তত ১৬ মেট্রিক টন পচা পেঁয়াজ চট্টগ্রামের খালের পাড়ে ও নদীতে পেয়েছেন নগরলি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত  থেকে এসব পেঁয়াজ ফেলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, গত তিন দিনে খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটের গুদাম থেকে ফেলা ১৫ থেকে ১৬ মেট্রিক টন পচা পেঁয়াজ তারা অপসারণ করেছেন।

মূলত এই খাতুনগঞ্জ থেকেই দেশের নানা ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশের বড় আমদানিকারক ও পাইকারদের বেশির ভাগেরই মালামাল গুদামজাত হয় এখানে।

দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ২৫০ টাকার ওপর। আজ শনিবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মিয়ানমারের ভালোমানের পেঁয়াজপ্রতি কেজি বিক্রি হয় ২২০ টাকায়। কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

আমদানিকারক ও পাইকাররা আমদানি না থাকায় পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করলেও বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, সরবরাহের ঘাটতির চেয়ে পেঁয়াজবাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। গুদামে পেঁয়াজ মজুদ করে রাখায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এই নিত্যপণ্যটির দাম।

এই আশঙ্কা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করেছেন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে তিনি বলেছেন, পেঁয়াজ নিয়ে চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করা হবে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া হয়ে পড়ায় এবং কোনো প্রতিকার না পেয়ে নিরুপায় ভোক্তারা কিছুদিন পেঁয়াজ না কেনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন মানুষকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এখন এই আহ্বানে সয়লাব।

এই আহ্বানে হোক কিংবা বেশি দামের কারণে হোক, বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি আগের চেয়ে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও পেঁয়াজের ব্যবহার কমেছে অর্ধেকের বেশি।

খালে-নদীতে পেঁয়াজের ভাগাড়

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ সংলগ্ন চাক্তাই খালপাড় ও কর্ণফুলী নদীতে এবং পাড়ে ফেলা হয় কয়েক শ পেঁয়াজের বস্তা। রাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেই পেঁয়াজ নিয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার আরেফিননগরে আবর্জনাগারে ফেলেন। এ ছাড়া নদী ও এর পাড় থেকে অনেককে পচা পেঁয়াজ কুড়িয়ে রোদে শুকাতে দেখা গেছে।

৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক আহমদ ছফা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটে, সামনের রাস্তায়, চাঁন মিয়া বাজার ও মধ্যম চাক্তাই এলাকায় পচা পেঁয়াজ পেয়েছি। চারটি ট্রাকে করে আমরা সেগুলো আরেফিননগরে ময়লার ভাগাড়ে ফেলেছি।’

আজ খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটে পেঁয়াজের গুদাম ও পাইকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ দেখা গেছে। এসব পেঁয়াজ কেউ কেউ বস্তাপ্রতি ১০০ টাকায় পচা-নষ্ট পেঁয়াজ থেকে কিছুটা ভালোগুলো বেছে নিয়ে বিক্রি করবেন তারা।

ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, গুদামে নয়, মিয়ানমার থেকে আনার সময় নৌকার তলায় পড়ে এসব পেঁয়াজ পচে গেছে। হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে পেঁয়াজ আসছে। যেসব পেঁয়াজ নৌকার তলায় থাকে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। গুদামে আসার পর সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আড়তদাররা মজুদ করা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেনি, পচে গেছে, সেগুলো এখন ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ তদারকির অভাবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মজুতদারির সুযোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে পেঁয়াজের সংকট কাটাতে মিয়ানমার থেকে প্রায় প্রতিদিন কিছু কিছু পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে খাতুনগঞ্জে। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, শুক্রবার ১৬৮ টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে এসেছে। গতকাল  দুপুর পর্যন্ত এসেছে ৭০ টন।

চলমান পেঁয়াজ সংকটের শুরু গত সেপ্টেম্বরে ভারত আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর দিন দুয়েকের মধ্যে তিনগুণ ছাড়িয়ে যায় কেজিপ্রতি দাম। মূলত পাইকারি পর্যায়ে দামের এই কারসাজি হয়, যার শেষ গন্তব্য খুচরা পর্যায়।

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় করতে সরকারি সংস্থা টিসিবি রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি, পাইকারি বাজারে প্রশাসনের অভিযান চললেও ঊর্ধ্বগতি ঠেকিযে রাখা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/মোআ)