তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ, নিহত ২
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকটা চাপে রয়েছে ইরান। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় পেট্রলের দাম হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে হাসান রুহানি সরকার। এছাড়া সবার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পেট্রোল বরাদ্দের জন্য রেশন ব্যবস্থা কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে অন্তত দুই জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পেট্রল থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শুক্রবার পেট্রলের দাম অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা দরিদ্রদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার পরিকল্পনা থেকে পেট্রলের দাম বাড়িয়েছে।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে গত বছর বেরিয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নিতি গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তার জের ধরে একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পড়েছে ইরানের ওপর। যাতে অর্থনৈতিকভাবে ভুগতে হচ্ছে ইরানকে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা জালানি মজুদ থাকা একটি গুদামে হামলা চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন মারা যান।
সিরজান শহরের এই ঘটনা বাদেও বেহবাহান শহরে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও রাজধানী তেহরানসহ কেরমানশাহ, ইসফাহান, তাবরিজ, করদজ, শিরাজ, ইয়াজদ, বোশেহর ও সারি শহরে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ।
অনেক শহরে ক্ষুব্ধ গাড়িচালকরা রাস্তার মাঝখানে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বা গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরানের গাড়িচালকরা ইমাম আলী হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে পুলিশকে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা যায় দক্ষিণানঞ্চলীয় শহর শিরাজের কয়েকটি পুলিশ স্টেশনে আগুন জ্বলছে। এ নিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের কৌঁসুলি মোহাম্মদ জাফর মোন্তাজেরি ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’কে দায়ী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এমনও বলেন যে বিক্ষোভকারীদের ‘দেশের বাইরে’র শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কী রয়েছে ইরানের নতুন নীতিমালায়?
নতুন আইন অনুযায়ী প্রত্যেক মোটরাযান মালিক ১৫ হাজার রিয়াল প্রতি লিটার দামে (.১৩ ডলার, .১০ পাউন্ড) মাসে ৬০ লিটার পেট্রল কিনতে পারবেন। এরই নির্ধারিত পরিমাণের পর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম পড়বে ৩০ হাজার রিয়াল।
এর আগে, একজন ব্যক্তি প্রতি লিটার ১০ হাজার রিয়াল দামে ২৫০ লিটার পর্যন্ত পেট্রল কিনতে পারতেন।
পেট্রলে ভর্তুকি বাদ দিয়ে যে পরিমাণ নগদ অর্থ আয় করবে সরকার, তা দিয়ে নিম্ন আয়ের দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি শনিবার বলেছেন ৭৫ শতাংশ ইরানি বর্তমানে ‘চাপের মুখে’ জীবনধারণ করছেন এবং পেট্রলের দাম বাড়ানোর সরকার যে অতিরিক্ত আয় করবে তা ইরানের কোষাগারে না গিয়ে ওই জনগণের কাছে পৌঁছাবে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কীভাবে ইরানকে প্রভাবিত করেছে?
জ্বালানিতে উচ্চমাত্রায় ভর্তুকি দেয়া এবং মূদ্রার মান হ্রাস পাওয়ার কারণে ইরানে জ্বালানি তেলের দাম খুবই কম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান। প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলারে তেল রপ্তানি করে তারা। কিন্তু তাদের শোধনাগার সুবিধা কম এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের কারখানার যন্ত্রাংশ আমদানি করাও তাদের জন্য কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে ইরান পরমাণু চুক্তির শর্তের বাইরে গিয়ে ধীরে ধীরে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করছে। তবে পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়ালেও নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা নেই বলে সবসময়ই দাবি করে আসছে তারা।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের মন্দা দেখা দেয়, যার ফলস্বরুপ ইরানের মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হয়। এছাড়া বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায় চার গুণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ গুটিয়ে নেয়া শুরু করেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে আরম্ভ করে।
ঢাকা টাইমস/১৭নভেম্বর/একে