বাস্তবের ড্রাগন ‘কমোডো’ (ভিডিও)

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:১৫

আবুল কাশেম, ঢাকা টাইমস

ড্রাগন। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশালকারের এক প্রাণীর ছবি। বড় চোখ, বিশাল জিহ্বা ও হা করলে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে আগুন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে রাজ করেছে এই প্রাণী। তবে এখনকার দুনিয়ায় সেই ড্রাগনের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও সেই ড্রাগনের মতোই দেখতে প্রাণী রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ধারণার ড্রাগনের চেয়ে এই ড্রাগন অনেকটা ছোট হলেও এর আকারও বিশাল। ইন্দোনেশিয়ার কমোডো নামের দ্বীপে এদের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় বলে এদের নাম কমোডো ড্রাগন। কমোডো দ্বীপ ছাড়াও রিনকা, গিরি মনটাং, ফ্লোরেস ও নূসা কোড দ্বীপেও বাস করে এসব ড্রাগন।

বাদামী রংয়ের উপর কালচে ছোপ মেশানো কমোডো ড্রাগনেরা অতিকায় দেখতে। এদের দাঁত ধারালো, লম্বা লেজ এবং এর কামড়ে বিষ রয়েছে। এরা প্রায় তিন মিটার লম্বা এবং আশি থেকে নব্বই কেজি ওজন হয়ে থাকে। কখনো তা একশ পঞ্চাশ কেজি ছাড়িয়ে গেছে এমন রেকর্ডও রয়েছে। তারা লম্বা, কমলা, চেরা জিভ দিয়ে শিকারের গন্ধ শোঁকার কাজ করে। ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার গতিতে দৌঁড়াতে পারে তারা।

বিশ্বে সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যা মাত্র ছয় হাজারের মতো। একারণে এরা বিশ্বের বিপন্ন বন্যপ্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এদের রক্ষায় কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, কমোডো ড্রাগন ৪০ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তনের ধারায় উৎপন্ন হয়েছিল এশিয়াতে। তারপর তারা পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে নিজেদের রুপ দিয়েছিল সরীসৃপ জগতের অন্যতম বৃহদাকার প্রাণীতে।

আজ থেকে পনেরো মিলিয়ন (দেড় কোটি) বছর পূর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার ভূ-তাত্ত্বিক সংঘর্ষের সময় কমোডো ড্রাগনদের একটি বড় অংশ চলে আসে ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি দ্বীপে। পরবর্তীতে বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর সমুদ্রের পানি বেড়ে যায়। ফলে কমোডো ড্রাগনেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাইরের জগত থেকে।

এদের খাদ্য তালিকায় আছে দ্বীপের ছোট্ট ব্যাঙ থেকে শুরু করে হরিণ, ছাগল, শুকর, কুকুর, মহিষ এমনকি মানুষও। যা সামনে পায় তাই খেয়ে সাবাড় করে দেয় বিশালাকারের এই প্রাণী। এক ইঞ্চি লম্বা দাঁত থাকলেও এদের কোনো বিষ থলে নেই। তবে এদের লালা বিষের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কোনো পশুকে কামড় দিলে সেই স্থানে জীবাণুর আক্রমণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফল অবধারিত মৃত্যু। শিকারি মাংস সাধারণত দলবেঁধে খেতে পছন্দ করে তারা। খাবার নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির তৈরি হয়।

তবে এদের খাবার নিয়ে যুদ্ধের চেয়ে যৌনতা নিয়ে যুদ্ধ আরও বেশি ভয়ঙ্কর। নারী ড্রাগনরা বছরে মাত্র একবার সঙ্গম করতে রাজি থাকে এবং পুরুষ ড্রাগনদের কেউই এই সুযোগ হারাতে চায় না। ফলে এক নারীকে পেতে অনেক পুরুষ ড্রাগন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। নারী ড্রাগন শুধু বিজয়ী পুরুষ ড্রাগনকেই গ্রহণ করে। পরাজিত ড্রাগন সেখান থেকে প্রস্থান করে। হয়তো তার জন্য আগামী বছর সৌভাগ্য অপেক্ষা করছে।

সাধারণত মে-আগস্টে এরা মিলিত হয় এবং সেপ্টেম্বরে ডিম পাড়ে। ড্রাগন সাধারণত ত্রিশটি ডিম পাড়ে এবং কয়েক মাস পাহারা দেয়। বাচ্চা ড্রাগনের জীবনের প্রথম কয়েক বছর কাটে গাছে গাছে, লুকিয়ে লুকিয়ে। শিকারের হাত থেকে বাঁচতে এমনকি স্বজাতির হাত থেকে বাঁচতে তাদেরকে জন্মের পর থেকে কৌঁশলি হতে হয়। একসময় পূর্ণ শক্তি ও অবয়বে এসব দ্বীপে রাজ করে সেই বাচ্চা ড্রাগন।

ঢাকা টাইমস/১৭নভেম্বর/একে