পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ

‘বেশি বিল’ পাইয়ে দেয়ার নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ!

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:১৩

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ (ফাইল ছবি)

পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের জন্য মাদারীপুর জেলার শিবচরে অধিগ্রহণ করা জমির বিল বেশি পাইয়ে দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে এক গ্রামের ১০টি পরিবার।

ভুক্তভোগীদের একজন শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের হালান শেখ। তার পরিবার জানায়, বছর দুয়েক আগে পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের সময় কাঁঠালবাড়ী এলাকার চান মিয়া ঢালীর সহযোগিতায় রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার জমির নির্দিষ্ট টাকা উত্তোলন করেন। এরপর তার অন্যান্য জমির জন্য তাকে বেশি টাকা পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক দফায় ৩০ লাখ টাকা নেন চানমিয়া। একই  সঙ্গে একটি সাদা স্ট্যাম্পে হালান শেখের সই নেওয়া হয়।

এরপর হালান শেখের অন্যান্য জমি অধিগ্রহণের টাকাও উঠিয়ে নিতে শুরু করেন চান মিয়া। বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়ার পর বিষয়টি বুঝতে পারেন হালান শেখ।

এ নিয়ে চান মিয়ার সঙ্গে বাগবিত-ার ঘটনায় ওই গ্রামের অন্যদের সঙ্গেও চান মিয়া ঢালীর প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, বাড়তি টাকা পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চান মিয়া। তাদের এ বিষয় গোপন রাখতে বলেছিলেন তিনি।

প্রতারণার শিকার হালান শেখ তার টাকা ফেরত চাইলে চান মিয়া ঢালী উল্টো হালান শেখ ও একই এলাকার নুরুল ইসলাম বেপারীর নামে মামলা করেন। এ মামলায় নূরুল ইসলাম বেপারী বর্তমানে জামিনে থাকলেও হালান শেখ জেল হাজতে রয়েছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হালান শেখের পরিবারের মতো ওই এলাকার বহু পরিবারকে বেশি বিল পাইয়ে দেওয়ার নামে চান মিয়া মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন তাদের কাছ থেকে।

ওই এলাকার জালাল আকনের স্ত্রী হালিমন নেছা বলেন, ‘চান মিয়া আমার কাছ থকে দুই লাখ টাকা নেন আমাকে জমির অতিরিক্ত বিল পাওয়াই দেবে বলে। কিন্তুআমি অতিরিক্ত কোনো বিল পাইনি। ওই টাকাও ফেরত দেয়নি।’

এমনই একজন ভুক্তভোগী আবদুল হক বেপারী। তার কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন চান মিয়া। ভুক্তভোগী আব্দুল হক বলেন, ‘চান মিয়া একটা প্রতারক। আমার কাছ থেকে নেওয়া সাত লাখ টাকা ফেরত চাইলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন।’

এলাকার আজিজুল খান, মজিবর শেখ, আছিয়া বেগম, নাজমা বেগম, আয়না বেগম, পূরবী আকতারের পরিবারসহ অন্তত ১০টি পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উল্টো তাদের নামে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে চানমিয়া ঢালীর বিরুদ্ধে।

হালান শেখের স্ত্রী শাহিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীর সরলতার সুযোগে প্রতারক চান মিয়া ঢালি আমাদের ভূমি অধিগ্রহণের সব টাকা হাতিয়ে নেয়। সে প্রতারণা করে আমার স্বামীকে জেলে দিছে। এখন আমি তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি এর বিচার চাই।’

তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন চান মিয়া ঢালী। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক মিথ্যা কথা বলছে। সব অভিযোগ ভুয়া ও বানোয়াট।’

চান মিয়ার বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি বলে জানান শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। তিনি  বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)