আ.লীগে বিএনপি নেতা, কথায় কথায় বন্দুকের হুমকি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, লক্ষ্মীপুর
| আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩৩ | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩১
ফাইল ছবি

তিনি নাকি একসময় লক্ষ্মীপুরে জেলা বিএনপির নেতা ছিলেন। ড. আশরাফ সারু নামের ওই নেতা এখন রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন নিজেকে। আর তার বিরুদ্ধে সমালোচনার কারণে কথায় কথায় বন্দুকের ভয় দেখান বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। এতে করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে নানা সমালোচনা।

তৃণমূল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ড. আশরাফ সারু দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কখনো আওয়ামী লীগ করেননি তিনি। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সময় ড. আশরাফ সারুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

বর্তমানে তিনি নিজেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কথায় কথায় নিজের ব্যবহৃত বন্দুক বের করে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন স্বানীয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

সারুকে নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সরগরম। বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাসে তাকে বিতর্কিত, সমালোচিত ও অযোগ্য হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সাবধান করে বলা হচ্ছে, এমন লোকজনকে ব্যক্তিস্বার্থে সংগঠনের দায়িত্বে দিলে তাতে লালবাতি জ¦লবে।

এসব ঘটনায় বিব্রত ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তারা দাবি করছেন, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত ও অন্য দলের কোনো নেতাকর্মীকে যেন আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ে না রাখা হয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও নেতাকর্মীরা এমন বক্তব্য দিয়ে আসছেন।

অভিযোগ করা হচ্ছে, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ড. আশরাফ সারু নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দেন। গত ১১ নভেম্বর আলেকজান্ডারের ভাই ভাই কমিউনিটি সেন্টারে পৌরসভা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে বাইরে রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলালকে বন্দুক উঁচিয়ে হুমকি দেন সারু। এ নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা। পরে জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে উত্তোজনার নিরসন হয়।

এর কয়েক দিন আগে চরলরেন্সের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল কাশেম তার পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকেও বন্দুক বের করে সরু হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেকোরেটর ব্যবসায়ী জানান, ‘সমাবেশের স্টেজের পাওনা টাকা চাইতে গেলে ড. আশরাফ সারু বন্দুক বের গুলি করার হুমকি দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। বিষয়টি অনেক নেতাকর্মীদের জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

সারুর বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও ঘটনা রয়েছে বলে জানান নেতাকর্মীরা।

সারুর অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে নেতাকমীরা জানান, ১৯৯৭ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ সামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের কমিটির ৫৯তম সদস্য ছিলেন ড. আশরাফ সারু।

সারুর বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা জানিয়ে চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা তাওহিদুল ইসলাম এবং জেলা পরিষদের সদস্য ও রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রুপেনা বেগম জানান, ড. আশরাফ সারু কখনো আওয়ামী লীগ করেননি। তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন।

রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল জানান, ‘পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে সারু আমাকে বন্দুক বের করে গুলির হুমকি দেয়। এ ছাড়া যে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না, সে কীভাবে নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দেয়! এটা ভাবতেও কষ্ট হয়।’ অনতিবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে সারুর বন্দুক জব্দ করার দাবি জানান তিনি।

সারু যদি আওয়ামী লীগের কেউ না হন তাহলে তিনি কীভাবে দলের সভা-সমাবেশের মঞ্চে স্থান পান জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘সারু কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এখন কীভাবে সে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশের স্টেজে উঠে বসে, সেটা আমার জানা নেই।’

আর ড. আশরাফ সারু বিএনপি করেছেন কি না, সেটা তার জানা নেই বলে জানান এসব বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি জানান, ‘সারু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী এ ধরনের তথ্য আমার জানা নেই।’ তবে সারু আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে দাবি করেন তিনি।

সারুর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :