বাগদাদির খোঁজ দিয়েছিলেন ইরাকি গোয়েন্দারা

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

গত মাসের শেষের দিকে জঙ্গি সংগঠন আইএসের তৎকালীন প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে হত্যা করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর তার মৃতদেহ সাগরে ফেলে দেয়া হয়। বাগদাদিকে হত্যার সব কৃতিত্ব মার্কিন ডেল্টা ফোর্সকে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে ইরাকি গোয়েন্দাদের। কারণ তারাই শুরুতে বাগদাদির খোঁজ দিয়েছিলেন।

সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরাকেরা সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জেনারেল সাদ আল আলাক এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে বাগদাদির অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ইরাকি গোয়েন্দারা। তাদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতেই তাকে হত্যা করেছে মার্কিন বাহিনী।

তিনি জানান, গত মে মাসে বাগদাদির শ্যালক মহম্মদ আলি সাজেত আল-জুবেই ইরাকের হাতে ধরা পড়ে। ২০১৫ সালে আইএসে যোগ দেওয়া জুবেই অল্পদিনেই আইএস প্রধানের বিশ্বস্ত অনুচর হয়ে উঠেছিল। তার কথা থেকেই বাগদাদির অবস্থান সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণা পান ইরাকি গোয়েন্দারা।

আলাক জানান, ‘আমরা পরিবারের লোকেদের মাধ্যমে পরোক্ষে বাগদাদির উপর নজর রাখছিলাম। সেনা এবং গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে বাগদাদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার ছিল জুবেইয়ের হাতে। ফলে, তাকে ধরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসে। সিরিয়া সীমান্ত সংলগ্ন কাইমের মরুভূমিতে একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান দিয়েছিল জুবেই। সেখান থেকে বাগদাদির বেশ কিছু গোপন জিনিস, ম্যাপ, হাতে লেখা নোট উদ্ধার করে ইরাকি বাহিনী। জুবেই জানিয়েছিল, সিরিয়া সীমান্ত সংলগ্ন ইদলিবে থাকতে পারেন বাগদাদি।’

আলাকের কথায়, কিন্তু ইরাকের গোয়েন্দারা সে কথা প্রথমে বিশ্বাস করেননি। কারণ, ইডলিব দীর্ঘদিন ধরে আলকায়দার মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির এ শাম এর অধীনে। মতাদর্শগত পার্থক্যের জন্য আইএসের সঙ্গে আল কায়দা এবং তাদের সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সেই কট্টর শত্রুর ডেরায় বাগদাদি লুকিয়ে থাকবেন, এমনটা ভাবতে বেশ অসুবিধাই হয়েছিল ইরাকি গোয়েন্দাদের। কিন্তু তার পর বাগদাদির স্মাগলিং নেটওয়ার্কের হদিশ পায় ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী। আর তাদের সূত্র ধরে জানা যায়, জুবেই সত্যি কথাই বলেছিলেন। তুরস্ক থেকে মাত্র তিন মাইল দূরের একটি গ্রামে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন আইএস প্রধান।

এরপর সংগৃহীত সেই তথ্য আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে তুলে দেয় ইরাক। তারপর সিআইএ এবং যু্ক্তরাষ্ট্র অভিযানের তোড়জোড় শুরু করে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কুর্দ সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস। এরপরই ২৬ অক্টোবরের সেই রাত। ইডলিবের কাছে বরিশা গ্রামে মার্কিন হানায় বাগদাদির মৃত্যু।

২০১৪ সালের জুলাইয়ে মসুল থেকে খলিফাতন্ত্র ঘোষণার পর থেকেই বাগদাদিকে হাতে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে ইরাক। প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘অপারেশন ফ্যালকন আই’। সীমান্তবর্তী শহরগুলিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় গুপ্তচর। একবার বাগদাদি প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অবস্থান বদল করেন তিনি।

ইরাকের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি, দিনে প্রায় ১০ বার আস্তানা বদল করতেন বাগদাদি। আইএসের ত্রাসের রাজত্ব যখন তুঙ্গে, সেই সময়টা বাগদাদি ইরাকে ছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। ২০১৭ সালে আইএস অধিকৃত সিরিয়ায় পালান। সেই সময় তার পালানোর পথে কড়া নজর রেখেছিল ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু সেখানে বাগদাদির ত্রাতার ভূমিকা পালন করেছিলেন বাগদাদির তৃতীয় পক্ষের শ্বশুর। ইরাকের মসুল থেকে সিরিয়ার রাকা- আইএস জঙ্গিদের নিঃশব্দে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বিশেষ হাতযশ ছিল তার। বিশেষ ক্ষমতার জন্য নাম পেয়েছিলেন ‘ঘোস্ট অফ দ্য ডেসার্ট’।

ঢাকা টাইমস/১৮নভেম্বর/একে