ভাঙল অলির দল, নেতৃত্বে আব্বাসী-সেলিম

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০৫ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) ভাঙন দেখা দিয়েছে। দলীয় প্রধান অলিকে বাদ দিয়ে নয় সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন বিদ্রোহীরা।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আবদুল করিম আব্বাসীকে। আর মহাসচিব হয়েছেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।

বর্ধিত সভা করে এলডিপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। নতুন এলডিপি ২০ দলেই থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

বিএনপি ভেঙে গড়ে তোলা দল এলডিপিতে অস্থিরতা চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। গত জুনে এলডিপি ছাড়েন সাবেক সাংসদ আব্দুল করিম আব্বাসী, আব্দুল্লাহ ও আব্দুল গনি। সংগঠনের নিয়মিত কার্যক্রম না থাকা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়া ও রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন না করার অভিযোগে তারা পদত্যাগ করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এলডিপি ছাড়েন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান।

গত ৯ নভেম্বর ২০৩ সদস্য বিশিষ্ট দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির তালিকা প্রকাশ করে এলডিপি। সাত মাস ধরে দলের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার অভিযোগে এই কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে রাখা হয়নি।

এরপর থেকেই এলডিপিতে ভাঙনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে গত শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বৈঠক করেন অলিবিরোধী নেতারা। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় নতুন কমিটি করার।

বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে অলিকে যোগাযোগ মন্ত্রী করা হয়। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মনোনয়নসংক্রান্ত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন এমপি নিয়ে অলি আহমদ পৃথক দল এলডিপি গঠন করেন। তবে পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্ত হন অলি আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম বলেন, ‘গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের রোষানলে পড়ে কারাবন্দি রয়েছেন। তাকে মুক্ত করার জন্য যখন দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ার দরকার, তখন নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার জন্য একটি পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে কর্নেল (অব.) অলি সাহেব তার এক বক্তব্যে পুরো বিএনপির নেতৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তার এই বক্তব্যে (তিনি) বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় এবং তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়াস চালাবেন সেখানে জোটের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য জাতীয় মুক্তিমঞ্চ তৈরি করেছেন।’

সেলিম বলেন, ‘শুরুতে মুক্তি মঞ্চকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম বলা হলেও ধীরে ধীরে তার জিয়া পরিবার আর বিএনপির বিষোদগার করার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বিতর্কিত আর দুর্বল করার চেষ্টা ষড়যন্ত্র শুরু করে যা আমাদের মতো জাতীয়তাবাদী আদর্শের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কোনো দলের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানো আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে।’

‘কর্নেল (অব.) অলির অতি জামায়াতনির্ভরতা ও জামায়াতপ্রীতির কারণে তার সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। সেই কারণে দূরত্ব সৃষ্টি। ফল হিসেবে নতুন এলডিপি গঠন করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে এলডিপি থেকে কর্নেল অলিসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়ার কথাও জানানো হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে তারা রাজনীতি তথা দলের মধ্যে ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলেও দাবি করা হয়।

সেলিম বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করছি, দেশের এই ক্রান্তিকালে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকদের দুর্দিনে দেশপ্রেমিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতিতে আরও বলিষ্ঠভাবে অংশগ্রহণ করব। সঙ্গে সঙ্গে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সক্ষম হবো। নিজেদের নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে এলডিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অচিরেই একটি কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।’ এই প্রয়াসে বিএনপি স্বীকৃতি দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এলডিপি নেতা বলেন, ‘বিএনপি ভেঙে এলডিপি গঠন করে যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি আমাদের আমন্ত্রণ জানায় তাহলে আমরা এলডিপি বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যুক্ত হবো।’

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/বিইউ/জেবি)