সস্তায় পেঁয়াজ তুলে দিয়েও ধমক খাচ্ছেন ফজলু!

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ পেঁয়াজের চড়া দামে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। তবে গত দুদিন ধরে উচ্চমূল্য থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ! কিন্তু এখনো ভিড় লেগে আছে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাকের সামনে। কারণ সেখানে জনপ্রতি এক কেজি পেঁয়াজ মিলছে ৪৫ টাকায়।

তাই তো ক্রেতাদের চাপে দম ফেলারও সুযোগ পাচ্ছেন না টিসিবির ট্রাকে থাকা ব্যক্তিরা। একেকটি ট্রাকে সাধারণত তিনজন দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এরা টিসিবির ডিলারের হয়ে কাজ করেন। এদেরই একজন ফজলুর রহমান।

পঞ্চাশোর্ধ এই মানুষটি পুরানো রমনা থানার ফটকের সামনে টিসিবির ট্রাকের উপরে বসে  লাইনে দাঁড়ানো নারী-পুরুষের হাতে পেঁয়াজ তুলে দেন। কিন্তু লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মানুষের চাপ সামাল দিতে গিয়ে তার দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা।

কখনো পেছন দিক থেকে তাকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বলা হচ্ছে তীর্যক মন্তব্য! কখনো বা পাশ থেকে কোনো নারী তাকে কেন পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে না এজন্য ‘গিলতে’ হচ্ছে ধমক। এক পর্যায়ে আক্ষেপ করে ফজলুল হক বলে ওঠেন, ‘ওরে আল্লাহ এই পেঁয়াজের দাম কমবে কবে? আর ভালো লাগে না।’

মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, ফুটপাতের পাশে রাখা টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাকের সামনে পুরুষের একটি লম্বা লাইন। পাশে নারীদের লাইন থাকলেও অনেকে লাইন ভেঙে ট্রাকের পাশে জটলা করে পেঁয়াজ কেনার চেষ্টা করছেন। যদিও ট্রাকে থাকা লোকজন বারবার বলছিলেন, লাইন ছাড়া দেয়া যাবে না। লাইনে আসেন আগে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একসঙ্গে আট-দশজন টাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে পেঁয়াজ দেয়ার অনুরোধ করেন।

নারীদের লাইনের যখন এই অবস্থা তখন দেখা যায়, পুরুষরা জোরে জোরে বলছেন যেন তাদের পেঁয়াজ দেয়া শুরু করা হয়। তাদের অভিযোগ অনেকক্ষণ ধরে নাকি নারীদেরই পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। এসময় ট্রাক থেকে বলা হয়, যারা আছেন সবাই পেঁয়াজ পাবেন। কারণ এখনো এক বস্তা পেঁয়াজ আছে। একথা শুনে কিছুটা শান্ত হন পুরুষ ক্রেতারা।

দেখা গেছে, বস্তা থেকে পেঁয়াজ ঢেলে একজন পলিথিনে ভরে দিচ্ছেন। ফজলুর রহমান টাকা বুঝে পেয়ে পেঁয়াজ জিডিটাল স্কেলের (ওজন মাপার মেশিন) ওপর তুলে এক কেজি করে দেন। 

এক সময় দেখা যায়, পুরুষদের লম্বা লাইন থাকলেও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা ট্রাকের কাছে এসে তার হাতে টাকা গুজে দিয়ে পেঁয়াজ দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ফজলুর রহমান নাছোড়বান্দা। তিনি কোনোভাবেই তাকে পেঁয়াজ দেবেন না বলে জানান। বলেন, ‘আপনারে দিতে গেলে মানুষ গালি দিবো। এরা বহুসময় ধরে লাইনে আছে।’

ট্রাকে থাকা একজন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পাঁচ বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে তারা এসেছেন। যতক্ষণ থাকবে ক্রেতাদের একজনকে এক কেজি করে দেয়া হবে। কিন্তু শেষ হয়ে গেলে তাদের কিছু করার  নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/বিইউ/জেবি)