শ্রমিক-মালিকদের আপত্তি যে দুটি ধারায়

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩২

নতুন সড়ক আইনের যে ৯টি ধারা নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আপত্তি জানাচ্ছেন তার একটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই ধারাতে দুর্ঘটনার পর চালক গ্রেপ্তার হলে জামিনের সুযোগ নেই। এই ধারাটিসহ সড়ক পরিবহন আইনের মোট ৯টি ধারা সংশোধন চেয়েছে পণ্যপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন। তবে নির্দিষ্ট দুটি ধারা সংশোধন করা হলেই এই আইন নিয়ে আপত্তি থাকবে না বলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

নতুন সড়ক আইন কার্যকর করা হলে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তারা নতুন সড়কের আইনের ৯টি ধারা সংশোধন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান। ৯ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেন মালিক-শ্রমিকরা।

দাবির মধ্যে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিটের বিষয়ে নতুন আইনের ৭৪ থেকে ৭৭ ধারার জরিমানা বিধান রাখা হয়। পূর্বের তুলনায় এবার জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে কয়েকগুণ। জরিমানা বৃদ্ধির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকপক্ষ।

তবে তাদের মূল আপত্তি ৮৪ ও ১০৫ ধারাকে কেন্দ্র করে। ৮৪ ধারায় মোটরযানের কারিগরি বিনির্দেশ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। সড়ক আইনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো মোটরযানের বিনির্দেশ অমান্য করলে ধারা ৪০ এর বিধান লঙ্ঘন করা হবে। এক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের কারণে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

শ্রমিকদের আপত্তির মূল কেন্দ্রবিন্দু ১০৫ ধারায়। আইনে বলা হয়েছে, বেপরোয়া বা অবহেলা জনিতভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে বা কারও প্রাণহানী ঘটলে তা পেনাল কোর্টের ১৮৬০ এর ৩০৪ (খ) ধারার অপধার হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে চালকের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ অপরাধে চালকের উভয় দণ্ড হতে পারে।

বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটলে চালকে গ্রেপ্তার করা হবে। এক্ষেত্রে চালক জামিন পাবেন না। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি দেখা গেছে পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে।

আইনের যে সকল ধারায় পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৮৬, ৯০, ৯৮ ধারায়। এররমধ্যে ৮৬ ধারায় ধারণ ক্ষমতার বেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, পণ্যবাহী পরিবহনের মধ্যে ট্রাক ও পিকাপ ভ্যানে বরাবরই ধারণ ক্ষমতার বেশি পণ্য পরিবহন করা হয়। এতে পরিবহন কাত হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার চিত্রও নিয়মিত।

অবৈধ পার্কিং ও যত্রতত্র পণ্য উঠানামার ক্ষেত্রে নতুন আইনের ৯০ ধারায় ৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে আপত্তি রয়েছে পণ্য পরিবহনে যুক্ত মালিক-শ্রমিকদের।

ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর অনেক জায়গায় সড়ক আগের তুলনায় অনেকটাই সরু হয়ে গেছে। এসময় সড়কে গাড়ি রেখে পণ্য ওঠা-নামা এবং অবৈধ পার্কিং বাড়তি যানজট এবং ভোগান্তি সৃষ্টি করে। রাজধানীর রোকেয়া সরণী, মিরপুর-১ নম্বর, প্রগতি সরণিতে এমন দুর্ভোগের চিত্র নিয়মিত।

৯৮ ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে মোটরযান দুর্ঘটনা ঘটলে এবং তাতে কেউ আহত বা নিহত হলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ১০৫ ধারাও একই ধরণের অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা মোট ৯টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। এরমধ্যে ৮৪ ও ১০৫ ধারা সংশোধন করে অন্য কোনো ধারা সংশোধন না করলেও চলবে। এরমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটনে জামিন পাওয়া যাবে না। এটা আমরা জানতে রাজি নই।’

শ্রমিক-মালিকদের এমন দাবির বিষয়ে কিছুটা আপত্তি রয়েছে দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুন নেওয়াজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তাদের দুটি দাবির মধ্যে একটি হচ্ছে যানবাহনের কারিগরি বিনির্দেশ। এটি বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর দুর্ঘটনায় জামিনের বিষয়টির বিষয়ে আমি বলব, এবিষয়ে সরকার আরও একটু ভাবতে পারে।’

‘কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে তারা জামিন পাবে না, এটির সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার একটা দীর্ঘসূত্রতা আছে। এতে এক মাস, তিন মাস জেলে থাকার পর দেখা গেল, দুর্ঘটনার পেছনে চালকের দোষ নেই! তাই জামিন দেয়া যেতে পারে। যে হাজিরা দিবে, দোষ প্রমাণ হলে সাজা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :