পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চুয়াত্তরের পদধ্বনি দেখছেন মওদুদ

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিত্যপণ্যের বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে ১৯৭৪ সালের মতো অস্থিরতা তৈরির আলামত দেখতে পাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। বলেন, ‘চুয়াত্তর সালের যে ঘটনা বাংলাদেশে, যে অর্থনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করেছিল, আজকে সেই একই পদধ্বনি আমি দেখতে পাচ্ছি।’

ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি আয়োজিত এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

মওদুদ বলেন, ‘পেঁয়াজের সমস্যা নিয়ে আজকে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। একটা সরকার যে একটি সামান্য পণ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনা সেই সরকারের মনে হয় আর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। পেঁয়াজের পরে আসলো লবণ, এখন চালের দাম একদিনে পাঁচ টাকা বেড়েছে।’

‘চুয়াত্তর সাল এখনও আমার চোখের সামনে ভাসছে। চুয়াত্তর সালের যে ঘটনা বাংলাদেশে, যে অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা বিরাজ করছিল, যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, আজকে সেই একই পদধ্বনি আমি দেখতে পাচ্ছি।’

গেল সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রপ্তানি বন্ধে ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা অস্থিরতার মধ্যে নিত্যপণ্যটির দাম কয়েকগুণ বেড়ে আড়াইশ টাকা ছাড়ায়। সরকারের নানা উদ্যোগ আর জরুরি ভিত্তিতে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণার পর গত দু’দিন ধরে পড়তির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দাম।

তবে দাম বাড়ানোর প্রবণতা প্রভাব ফেলেছে আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যে। এরইমধ্যে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকার মত বেড়েছে। সরকার বলছে, চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই।

মওদুদ বলেন, ‘২০১৯ সালটা বর্তমান সরকারের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি বছর। সারা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক বছর। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে। নুসরাত হত্যা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি, সেখান থেকে শুরু করে যুবলীগের ক্যাসিনো-কাণ্ড, তারপরে পেঁয়াজ ও লবণের সমস্যা।’

তিনি বলেন, ‘যে সরকার সামান্য নিত্যপণ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার আর থাকে না। আর এখন এধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। চালের দাম একদিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে! এসব কারণে আমি আবারও দেশে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।’

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। বলতে চাই, এখনই সময়- আপনারা পদত্যাগ করুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যাতে করে এদেশের মানুষ নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তারা তাদের পছন্দ মতো প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এটাই এখন একমাত্র সময়ের দাবি। আর এটা যদি আপনারা নিজে থেকে না করেন তাহলে দেশের মানুষ তা আদায় করে নেবে।’

‘বিরোধী দলকে দমন করতে গিয়ে সরকার সব মানুষের সুখ-শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। এজন্য মানুষের মধ্যে আজ আর শান্তি নাই। একটার পর একটা সংকট দেখা দিচ্ছে দেশে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই সরকার দেশে এই নৈরাজ্যেকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামিনে যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় তাহলে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে তার মুক্তি নিশ্চিত করা। আজ দেশের মানুষ তা করতে প্রস্তুত ও তৈরি আছে। মানুষ আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যে আমরা কী ধরনের কর্মসূচি দেই। সেই কর্মসূচিতে মানুষ অংশগ্রহণ করে বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু নয়, গণতন্ত্রও ফিরিয়ে আনবে।’

দোয়া মাহফিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আহমদ আযম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/বিইউ/ডিএম)