লাম্বার কথা খুব মনে পড়ে: খালেদ মাসুদ

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:১৯

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ছবি: সংগৃহীত

সার্কাসে ট্রাপিজের খেলা বড় বিপজ্জনক। সরু সুতোয় ঝুলছে জীবন-মৃত্যু। ক্রিকেটও অনেকটা যেন সেই ট্রাপিজেরই খেলা। এই জীবন তো এই মৃত্যু! বোলারের বিষাক্ত ডেলিভারি এক মুহূর্তেই ব্যাটসম্যানের খেলা শেষ করে দিতে পারে। আবার এই বল আক্ষরিক অর্থেই কেড়ে নিতে পারে তাজা প্রাণ।

ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ১৯৯৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। সেই দিনে মেহরাব হোসেনের ব্যাট থেকে ছিটকে আসা বল রমন লাম্বার জীবনদীপ নিভিয়ে দেয়। ২১ বছর আগের ঘটনা এখনও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের বুকে ঝড় তোলে, চোখের কোল করে তোলে ভারী। সেদিনের সেই ম্যাচে লাম্বার দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, ‘আমাদের কথা শুনে হেলমেট পরলে তাকে (রমন লাম্বা) এভাবে চলে যেতে হত না।’

কী হয়েছিল সেদিন? ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঘরোয়া লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। স্মৃতির পাতা উল্টে খালেদ বলেছেন, ‘খেলার মাঠে আবাহনী ও মোহামেডানের লড়াইয়ের কথা সবারই জানা। সেই ম্যাচটা ছিল লো স্কোরিং। তাই টেনশনও ছিল।’

মোহামেডানকে চাপে ফেলতে ফিল্ডারদের ক্লোজে ডেকে এনেছিলেন খালেদ। রমন লাম্বা দাঁড়িয়ে পড়েন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। গড়গড় করে সেই ম্যাচের বিবরণী দিয়ে খালেদ বলেন, ‘আমাদের ক্যাপ্টেন আকরাম ভাই (আকরাম খান) চোটের জন্য মাঠে ছিলেন না। আমি দলটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। খুব কম রান করেছিলাম আমরা। ওই রানের পুঁজি নিয়ে জিততে হলে আমাদের অ্যাটাকিং ফিল্ডিং করতে হত। সবাইকে ক্লোজে ডেকে নিয়েছিলাম। রমন লাম্বা হেলমেট ছাড়াই দাঁড়িয়ে গেল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। আমি তাকে  বললাম, তুমি হেলমেট নিয়ে নাও। তিনি পাল্টা বলেন, দু’একটা বলের জন্য দরকার নেই হেলমেটের।’

পাইলট বলেছেন, ‘শর্ট বল করেছিল সইফুল্লাহ খান। অপি (মেহরাব) জোরে পুল মারে। লাম্বার মাথায় লেগে বলটা এল আমি যেখানে কিপিংয়ের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম তার ঠিক পিছনেই। ওয়ালে বল লাগলে যেমন রিটার্ন আসে লাম্বার মাথায় লেগে ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। আমি ধরে ফেলি সেই ক্যাচ।’

আহত লাম্বা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার পরের ঘটনা সবার জানা। ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কোমায় চলে যাওয়া লাম্বাকে আর বাঁচানো যায়নি। জীবন-মৃত্যুর মাঝে তিনি থমকে ছিলেন তিন দিন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে লাম্বা চলে যান না ফেরার দেশে।

খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, ‘রমন লাম্বার কথা খুব মনে পড়ে। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ওকে মিস করব। ওর এভাবে চলে যাওয়াটা এখনও মানতে পারি না। অপি আর সইফুল্লাহ অনেক দিন ভুলতে পারেনি ওই ঘটনা। নিজেদের অপরাধী বলে মনে করত। তার মাথায় বলটা আছড়ে পড়তেই বুঝেছিলাম খারাপ কিছু একটা হবে। লক্ষণ দেখে সেরকমই মনে হচ্ছিল। যে দিন রমন লাম্বার দেহ ক্লাবে আনা হল, সেদিন আমরা নিজেদের আর স্থির রাখতে পারিনি।’

সেই সময়ে অরুণলাল, অশোক মলহোত্ররা বাংলাদেশের স্থানীয় লিগে খেলতেন। সামান্য কয়েক ঘণ্টা অনুশীলন করেই তাঁরা নেমে পড়তেন মাঠে। খালেদ বলেছেন, ‘রমন লাম্বা আমাদের কাছে আইডল ছিল। ভারতের হয়ে খেলেছিল। অথচ আমাদের সঙ্গে কত সহজ করে মিশত। কত কিছু শিখেছি রমন লাম্বার কাছ থেকে। ও কীভাবে শট মারত, পার্টনারশিপ কীভাবে গড়ত, তা দেখতাম। এগুলো পরে খুব কাজে দিয়েছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির পিছনে ওঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আজ রমন লাম্বা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি দেখে নিশ্চয়ই খুশিই হত।’

এই দিনটাই তো আর দেখা হল না রমন লাম্বার। তার আগেই ক্রিকেট বল ছিনিয়ে নিয়ে গেল ৩৮ বছরের ডাকাবুকো এক ক্রিকেটারকে। প্রমাণ করে দিয়ে গেল ক্রিকেট ট্র্যাপিজেরই খেলা। এই জীবন তো এই মৃত্যু!

(ঢাকাটাইমস/২১ নভেম্বর/এসইউএল)