বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ: বঙ্গবন্ধুর ন্যায়বিচার দর্শন

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২১ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:১১

মো. তাজুল ইসলাম

অপরাধী যেই হোক তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই স্লোগানে বা প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থা এগিয়ে চলেছে। অপরাধ করলে তার বিচার না হওয়া বা না করা এক ধরনের অভিশাপ ও ব্যাধি। অপরাধীর বিচারের মুখোমুখি করা সময়ের দাবি। রাষ্ট্র এখানে সোচ্চার। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১২ বছর বা এক যুগ পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মামলা নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় শুধু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৮৮ লক্ষাধিক মামলা। মামলা নিষ্পত্তি হার গড়ে ৯৫ শতাংশের বেশি। ১৯৯০-২০০৭ পর্যন্ত শাসন বিভাগ দ্বারা পরিচালিত ম্যাজিস্ট্রেসির নিষ্পত্তির হার ছিল ৮৭ শতাংশের কাছাকাছি। তবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ১ নভেম্বর ২০০৭ নির্বাহী বিভাগ হতে পৃথক হওয়ার দিন থেকে অদ্যাবধি মামলা নিষ্পত্তির হার কোনো কোনো বছর ১০০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।

বর্তমান ফৌজদারী বিচার বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির হার শতভাগ হওয়ায় এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, অপরাধ করে বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বের হতে পেরেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিবন্ধকতা বলে গণ্য হয়। যেকোনো দেশের সভ্যতার মানদণ্ড বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যায়বিচারের কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন. ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’

তাই ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে দায়-দায়িত্ব রয়েছে। তেমনি জনগণের আস্থার প্রতিও বিচার বিভাগের দায়ভার রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হলে আপিলের স্তর কমাতে হবে। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন আপিলের স্তর বাড়লে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। মানুষ হয়রানির শিকার হয়। মামলার বয়স ও দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ে কিন্তু বিচার প্রার্থীর আয়ু কমে। সে কারণে তিনি বিচার বিভাগকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন দ্রুতবিচার নিশ্চিত করতে পারলে দেশে বিচারহীনতা কমবে। আদালতের ওপর মানুষের আস্থা বহুগুণে বাড়বে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ন্যায়বিচার পাবে। 

ফেনীর মেয়ে নুসরাতকে সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষের ইন্ধনে গত ৬ এপ্রিল ২০১৯ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। নুসরাত ১০ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তদন্ত শেষে পিবিআই ১৬ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে ২৬ জুন চার্জশিট দাখিল করেন। বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারক ৮৭ সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা গ্রহণ করেন ২৭ জুন-৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অতঃপর আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২৪ অক্টোবর ফেনীর আদালত রায় ঘোষণা করেন এবং ১৬ জনকে ফাঁসির রায় প্রদান করেন আদালত। এই কেসটি বিশ্বব্যাপী নিউজে কাভারেজ পায়। নুসরাত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আত্মহুতি দিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছে তিনি প্রতিবাদী নারী। এখানে ভিকটিমের পরিবারকে রাষ্ট দ্রুতগতিতে ন্যায় বিচার দিতে পেরেছে। দেশ আজ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসেছে বলে নুসরাত হত্যার বিচার হয়েছে।

ইয়াসমিন আক্তার ১৪ বছরের মেয়ে ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। দিনাজপুরের দশমাইল নিজ এলাকায় ফিরছিল ২৪ আগস্ট ১৯৯৫ সালে। পথিমধ্যে পুলিশ ভ্যানে করে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাকে উঠিয়ে নেয়। পরে পুলিশ সদস্যরা ইয়াসমিনকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে হত্যা করে। ২৫ আগস্ট ১৯৯৫ সালে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক উত্তর বাংলায় পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনা নিয়ে ধর্ষণসহ হত্যা মামলা হলে ঘটনার দুই বছর পর ১৯৯৭ সালে দুজন পুলিশ সদস্য ধরা পড়ে। তদন্তে পুলিশ সদস্যরা অভিযুক্ত হন এবং বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আদালত তাদের ফাঁসির আদেশ দেন এবং ২০০৪ সালে পুলিশ সদস্যদের ফাঁসি বাংলার মাটিতে কার্যকর হয়। এখানে ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্যরাও অপরাধ করে পার পায়নি এবং তাদের বিচার হয়েছে। এখানে বিচার বিভাগের সফলতা। ভিকটিমের পরিবার বিচার পেয়েছে। অপরাধীরা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। এটাই আইনের শাসন। ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ড দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এরই মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে চলা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আইনি ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাঁচ খুনি ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অপরাধীদের অপরাধ করে পার না পেয়ে যাওয়ার রীতি চালু করেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ায় বিচারহীনতা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা।

বিশ্বব্যাপী ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নুরেমবার্গ চার্টারের মাধ্যমে গঠিত নুরেমবার্গ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ১৯৯৩ সালের পূর্বে যুগোস্লভিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে রোম স্টাচুট আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়েছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সমাদৃত হয়েছে। যারাই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তারাই বিচারের সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গুরুতর অপরাধসমূহ কোনোদিন বিচারহীন থাকেনি।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নিমিত্তে ঠিক একইভাবে আন্তর্জাতিক মানের অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচার করা হয়েছে । যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধে তদন্তে অভিযুক্ত করে এই পর্যন্ত ৪২ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৪৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলমান রয়েছে। জাতি কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে। এই উদাহরণগুলো বিচারহীনতা হতে বের হয়ে আসার সুস্পষ্ট আলামত। রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। যদিও কোনো কোনো পক্ষ এই বিচারকে প্রহসন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার তা বলার চেষ্টা করেন।

ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ কমবেশি সকলেই সরকারি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। কেউ যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মুল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ক্যাসিনো ব্যবসার সা্থে মাদক ও মানিলন্ডারিং ওতপ্রোতভাবে জড়িত বাংলাদেশে নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন হয়েছে যেটি মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধসমূহ দমনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে তা আশা করা যায়। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ইতিমধ্যে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। মানিলন্ডারিং আইনের কেসে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যেমন বিদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা ও টাকা পাচারকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা ইতিবাচক অগ্রগতি এবং বিচারহীনতা থেকে বের হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

ক্যাসিনোকাণ্ডের অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাঁধ সেধেছে বর্তমান সরকারের ঘোষিত শুদ্ধি অভিযান। এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের কাছে রাষ্ট্র প্রধানের ইতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে। এ বার্তাও ইতিমধ্যে জনগণ পেয়েছে যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাই আইনের চোখে সমান। রাষ্ট্র দুর্নীতি মূলোৎপাটন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে শপথ নিয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্র। দুর্নীতি প্রত্যক্ষভাবে উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। একইভাবে রাষ্ট্র তথা সরকারকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সরকারি আমলা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গ সকলকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। যেটি জনগণের জন্য অত্যন্ত সুখের ও আশার ব্যাপার। বিচারহীনতা সংস্কৃতি যেভাবে দূর হয়েছে বা হচ্ছে সেই রথ যেন আর কেউ না থামাতে পারে তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে।

মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রতিবেদন ২০১৯) (US Department of State, International Narcotics Control Strategy Report (INCSR) এর রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মাদক বাণিজ্য বিষয়ক ও মানি লন্ডারিং এবং অর্থনৈতিক অপরাধ দমন কার্যক্রমের সার্বিক পরিস্থিতি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা ও হামলার ঘটনা কমছে। এটা আমাদের জন স্বস্তির বিষয়| বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করে মার্কিন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকার সন্ত্রাস বাদ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ যে জঙ্গি দমনে সফল- এটি শুধু মার্কিন প্রতিবেদন নয়, দেশি-বিদেশি অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে। কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমকে ‘রোল মডেল’ হিসেবেও অভিহিত করেছে। বৈশ্বিক ও দেশীয় সন্ত্রাসবাদ দমনে বর্তমান সরকার মোটাদাগে সফল হয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনদের মধ্যে জমিয়াতুল মুজাহিদীন, হরকাতুল জিহাদ, সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জঙ্গিদের বিচারের মুখে এনে রাষ্ট্র সময়োচিত সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বরগুনার মিন্নির স্বামী রিফাত হত্যাকাণ্ড, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার একইভাবে হবে। যেমনভাবে বিশ্বজিৎ ও নুসরাত হত্যার বিচার হয়েছে। আবরারের হত্যাকারীরা সকলেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মী। তা সত্ত্বেও দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙেছে বলে তারা বিচারের আওতায় এসেছে। এবং তাদের বিচার রাষ্ট্র প্রশ্নাতীতভাবে সম্পন্ন করবে এটা অকপটে বলা যায়।

বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দ্রুততার সাথে বিচার কে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার রাষ্ট্রকে বিচারহীনতা থেকে মুক্ত করতে শিশু সিয়াম, ইয়াসমিন হত্যা, বিশ্বজিৎ হত্যা সর্বশেষ নুসরাত হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছে। যেখানে কে কোন দল করে তা না দেখে অপরাধীর বিচার হয়েছে। আবরার হত্যা মামলার চার্জশিটে কে কোন দল করে তা দেখা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াকে অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা, বিচার বিভাগকে আধুনিকায়ন তথা ডিজিটালাইজড করা, মামলার আনুপাতিক হারে বিচারক নিয়োগদান করা, অডিও ভিডিও ফুটেজ ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের সাক্ষ্যকে বিচারে অন্তর্ভুক্ত করা, বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা ইত্যাদির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দ্রুত ন্যায়বিচার দর্শন বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার দায়ভার রাষ্ট্রের ও বিচার বিভাগের।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও উন্নয়নকে স্থিতিশীল করতে বঙ্গবন্ধুর দ্রুত ন্যায়বিচার দর্শন কাজে লাগাতে হবে। তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ ও জাতি পুরোপুরি বের হতে পারবে। নির্যাতিত আপামর জনগোষ্ঠীকে ন্যায়বিচার দিতে পারলে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জিত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর দ্রুত ন্যায়বিচার দর্শন কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলার ভিত্তি আরও মজবুত করতে হবে।

লেখক: বিচারক, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত