দুই বাড়ির মালিক বৃদ্ধকে সড়কে রেখে গেলেন সন্তানরা

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:১৮ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩৮

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দাওয়াত খাওয়ানোর কথা বলে বাড়ির বাইরে এনে বৃদ্ধ পিতাকে রাজধানীর রাস্তায় ফেলে গেছেন সন্তানেরা। কয়েকদিন রাস্তায় পড়ে থাকার পর হতভাগা এই বাবার ঠিকানা হয়েছে বৃ্দ্ধাশ্রমে।

কানে কম শোনা এবং প্যারালাইজড আক্রান্ত এই বৃদ্ধার ডেমরায় নিজের দুটি বাড়ি আছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। বার বার বাড়ি ঠিকানা এবং এক মেয়ের নাম বললেও তা স্পষ্ট করে বোঝাতে পারছেন না। কয়েকদিন রাজধানীর রাস্তায় পরে থেকে শরীরের অবস্থাও এখন নাজুক।

বুধবার একজন নারী চিকিৎসক কল্যাণপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পরে কেয়ারের সদস্যরা ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের কেএফসি রেস্তোরাঁর পাশে সত্তরোর্ধ্বো এই বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মিলটন সমাদ্দার ঢাকাটাইমসকে বলেন, উনি একদমই কানে শুনতে পারেন না। শরীরের বাম পাশ প্যারালাইজড। রাস্তায় কয়েকদিন ফেলে রাখায় শরীর একদম ভেঙে পড়েছে। আমাদের নিজস্ব চিকিৎসক তাকে দেখেছেন। এখন চিকিৎসা পেয়ে উনি অনেক ভালো আছেন। আমাদের সবাই যেমন যত্ন পাই উনিও তেমন পাচ্ছেন। এখন খাওয়া দাওয়া করছেন। কদিন যত্ন নেওয়ায় চেহারা অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।

মিলটন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি অভিভাবকহীন এই মানুষটি মানসিক ভারসাম্যহীন। শরীরের ক্ষত ঘা আছে, শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। নিজ পরিচয় ঠিকানা তথ্য কিছু বলতে পারেন না। এরপর আমরা উনাকে উদ্ধার করে চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে নিয়ে আসি।

বৃদ্ধর পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে মিলটন বলেন, আমরা এখনো তার পরিবারের কাউকে পায়নি। উনি একদমই কানে শোনেন না। উচ্চস্বরে কথা বলতে হয়। কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি চার-পাঁচদিন আগে উনাকে বাসা থেকে দাওয়াত খাওয়াতে বের করা হয়েছিল। কারণ তিনি নিজ থেকে হাঁটতেও পারেন না। দাওয়াত খাওয়ানোর কথা বলে উনাকে ১৫ নম্বরের কেএফসির সামনে বসিয়ে চলে যাওয়া হয়। এখানে সব সময় অনেক লোক সমাগম থাকায় উনার থাকাও কষ্টকর ছিল। উদ্ধারের পর থেকে বারবার মেয়ের কথা বলছেন। তবে নাম বলতে পারেন নি। ঠিকানা বলেছেন ডেমরা। সেখানে বাড়িও আছে বলে জানিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে এক সাইড প্যারালাইজড এই কারণে বিছানায় পায়খানা-প্রসাব করেন। হয়ত একটা মাত্র মেয়ে সামলাতে পারছে না। চিন্তা করেছে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।

এ বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরের এই বৃদ্ধাশ্রমেই মারা যান মতিন মিয়া নামে এক ব্যক্তি। মতিনকে দুই বছর আগে দূর-সম্পর্কের মামা পরিচয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান নিজের সন্তান। মৃত্যুর আগে কয়েকবার ছেলে ও নাতি-নাতনিদের দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। বারবার মতিনের সঙ্গে সন্তানদের দেখা করতে বলা হলেও তারা কেউ আসেননি। এমনকি মৃত্যুর পরও বাবার মরদেহ দেখতে আসেনি ছেলে ও স্বজনরা। পরে তাকে মিরপুর করবস্থানে দাফন করেন বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীরা।

ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এসএস/ইএস