রাজধানীতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১৩ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
নির্যাতিত আঞ্জুমান আরা রেশমা (বাঁয়ে) ও অভিযুক্ত ওসমান ঢালী (ডানে)।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে বেধরক পেটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে মো. ওসমান ঢালী (৫০) নামে এক ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। 

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সকালে বিবাদী মো. ওসমান ঢালী খিলগাঁও এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীর ‘কে’ ব্লকের ১৬-নম্বর রোডের ২৮৪-নম্বর বাসায় স্ত্রী আঞ্জুমান আরা রেশমার (৩৫) কাছে ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। যৌতুক হিসেবে এ টাকা ভুক্তভোগীর ভাইয়ের কাছ থেকে এনে দিতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু টাকা আনতে অস্বীকার করায় স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন ওসমান ঢালী। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন বোন সাবিনা (৩০) ও ভাগনে জাবেদ (২০)। তারা তাকে রক্তাক্ত জখম করেন। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর ভাই ওই বাসায় গিয়ে বোনকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নির্যাতিত আঞ্জুমান আরা রেশমা ঢাকাটাইমসকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার উত্তর লক্ষণখোলা এলাকার মৃত আরজ ঢালীর ছেলে মো. ওসমান ঢালীর সঙ্গে ২০০৮ সালে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে তার ওপর নিয়মিত নির্যাতন করা হয়। কিন্তু একমাত্র সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাননি।

রেশমা বলেন, গত শনিবার ব্যবসার কথা বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আনতে বলেন ওসমান ঢালী। কিন্তু টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ওসমান ঢালী চুলের মুঠো ধরে আমাকে বাসার মেঝেতে ফেলে নির্মমভাবে পেটাতে থাকেন। এ সময় ওসমান ঢালীর বোন ও ভাগনেও আমাকে লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ওসমান ঢালী রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে আমাকে কোপ দেয়। বঁটির কোপ ঠেকাতে গিয়ে আমার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল এবং ডান হাতের অনামিকা রক্তাক্ত জখম হয়।

ওই গৃহবধূ বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি জেনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। বাসার ভাড়াটিয়া মিন্টু, পাশের বাড়িওয়ালা, কাজের বুয়া ও স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ যমুনা ফার্মেসিতে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমার মেয়ে তার মামাদের ফোন দিলে তারা এসে আমাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে- বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যৌতুকের দাবিতে শুধু তার স্বামী (ওসমান ঢালী) নয়, তার ছোট ভাই আজগর ঢালী, বোন সাবিনা, বোনজামাই সোনা মিয়া ও ভাগনে জাবেদ প্রায়ই তাকে নির্যাতন করত। কিন্তু একমাত্র মেয়ের কথা মাথায় রেখে সব নির্যাতন নীরবে সয়ে গেছেন। শুধু নির্যাতন নয়, টাকা এনে না দিলে তালাক দিয়ে বাড়ি ছাড়া করারও হুমকি দিয়েছেন ওসমান ঢালী।

নির্যাতিত নারীর ভাই এম. এ. রেজা বলেন, যৌতুকের দাবিতে এর আগেও আমার বোনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু এবার সীমা অতিক্রম করেছে। আমার বোনের সঙ্গে বিয়ের আগে ওসমান ঢালী আরও একটি বিয়ে করেন। বিষয়টি তারা গোপন রাখেন। ওই ঘরে তার একটি পুত্রসন্তানও আছে। ওই স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করতে এবং বনশ্রীর বাড়ি ছাড়া করতে আমার বোনের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে ওসমান ঢালী ও তার পরিবার।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সোমবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনিরুদ্ধ রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলার প্রধান অভিযুক্ত ওসমান ঢালীকে শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ঢাকাটাইমস/২৫ নভেম্বর/এএ/ইএস