ঘুষ দিয়েও বিদ্যুৎ বঞ্চিত দেড় হাজার পরিবার

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৩১

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেষা ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন। এখানে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা ঘুষ দেয়ার পরও দেড় বছরেও বিদ্যুৎসংযোগ পাচ্ছে না পাহাড়ি জনপদের পাঁচ গ্রামের হাজারো পরিবার। পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় কর্মচারীর অনৈতিক কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পাহাড়ি জনপদের এই মানুষেরা। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল মানেজার বলেছেন, বিদ্যুৎসংযোগ দিতে অতিরিক্ত টাকা বা ঘুষ নেয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ মাস্টারপাড়া, বগলাকান্দি, দিঘলাকোনা, ডুমুরতলা ও তমরুছপাড়া গ্রাম। বাঙালি ও আদিবাসী প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস এই পাঁচ গ্রামে। এই গ্রামগুলোতে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি ও বৈদ্যুতিক লাইন থাকলেও সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে পাহাড়ি জনপদের এসব মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাতির আক্রমণের শিকারও হতে হয় তাদের। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে এই এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও তাদের লোকজনের কাছে টাকা দিয়েও বিদ্যুৎসংযোগ নিতে পারছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যুৎলাইনের কাজের সময় প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেয় বকশীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় ইলেক্ট্রিশিয়ান কমকর্তাদের মনোনীত দালালরা। কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর বিদ্যুৎলাইনের সংযোগ দেয়ার জন্য প্রতিটি গ্রাহকের কাছে আবার চার থেকে পাঁচ হাজার উৎকোচ দাবি করেন। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের দাবিকৃত উৎকোচের টাকা না দেয়ায় বাড়িতে সংযোগ দিচ্ছেন না তারা। পাহাড়ি এই জনপদে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোকিত করতে এবং এলাকার উন্নয়নে স্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ছামিউল হক জানান, ১৫০০ গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন উপায়ে পল্লী বিদুতের অফিসাররা একেকজনের কাছ থেকে দুই হাজার, তিন হাজার, চার হাজার, পাঁচ হাজার করে নিয়ে এখন পর্যন্ত লাইন ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে গেছেন। আরও টাকা চাচ্ছেন, ঘুষ না দিলে লাইন দিচ্ছেন না।

আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র বলেন, ‘টাকা দিলাম আগে খুুঁটি ও খাম্বা গাড়ার জন্য। আরও দুই হাজার টাকা দিলে আমরা বিদ্যুত পাইবো। দুই হাজার টাকা দিতে পারছি না তাই বিদ্যুতও দিচ্ছে না।’

ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ননের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, জানানধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পাঁচটি গ্রামের তার টানানো হয়েছে এবং ট্রান্সমিটারও লাগানো হয়েছে। কন্ট্রাক্টারের গড়িমসির জন্য এখন পর্যন্ত তারা কারেন্ট পাননি। এই জায়গায় বিদ্যুৎ এলে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে বলে আশা করেন তিনি।

সাধু আন্দ্রে ধর্মপল্লীর ধর্মযাজক ফাদার শেখর রিচার্ড পেরোরা (সিএসসি) বলেন, কারেন্ট থাকলে আমাদের সুবিধাগুলো হতো, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমরা আরও অগ্রসর হতে পারতাম। আমরা চাচ্ছি যে, কারেন্টটা দ্রুত এলে আমাদের জন্য সুবিধা।

ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান পিটিশন সাংমা জানান, গাড়ো জাতিরা পাহাড়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এখানে হাতির উপদ্রব বেশি। বিদ্যুৎ তাড়াতাড়ি সংযোগ করলে তারা খুব উপকৃত হবে।

এবিষয়ে জামালপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আলমগীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে অফিসের কোনো লোক জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ওয়্যারিং করে অফিসে নির্ধারিত টাকা জমা দিলে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার দিয়ে দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :