সম্পাদকের টেবিলে যখন কালো চিঠি

দেলোয়ার হোসেন, টরন্টো, কানাডা
| আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ১২:১৮ | প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:২৩
ঢাকা টাইমস অফিসে সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন

বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাগর পারের দেশগুলো, আর লাভবান হচ্ছে রাশিয়া ও কানাডার মতো অতি শীতপ্রধান দেশ। উঞ্চতা বৃদ্ধিতে এ দেশগুলো ক্রমেই বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠছে। টরন্টোর ড্যানফোর্থের যে ফুটপাত দিয়ে আমি প্রতিদিন হেঁটে যাই আসি, ২০/৩০ বছর আগে নভেম্বরের শেষ দিকে এখানে নাকি শুভ্র বরফে ঢাকা থাকতো। ৪০ বছর আগে কানাডায় পাড়ি জমানো এক বাংলাদেশি ভদ্রলোক বললেন, ‘আপনারা এই সময়ে যারা আসছেন তারা ভাগ্যবান। আমাদের তো তখন নিত্যদিন বরফের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হতো।’

তবে শীতের প্রারম্ভে দুই সপ্তাহ আগে টরন্টেতে মাইনাস ১০ ডিগ্রিতে তাপমাত্র নেমে গিয়েছিল। টানা দুই দিন এখানে বরফ পড়েছে। রাস্তার বরফ গলাতে কানাডা সরকারকে লক্ষ লক্ষ টন লবণ ছেটাতে হয়েছে। রাস্তা গাড়ি চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন হলেও ফুটপাতের বরফ ৩/৪ দিন পর্যন্ত জমাট বেঁধে ছিল। বুট জুতা পায়ে সেই বরফের উপর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয় মানুষজনদের। যাদের গাড়ি আছে তাদের অবশ্য ঝামেলা নেই।

গত ৮/১০ দিন টরন্টোর তাপমাত্র বেশ সহনীয় মাত্রায় ছিল। ৩ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে। কানাডিয়ানদের কাছে এটাই আরামদায়ক আবহাওয়া! তবে সপ্তাহান্ত থেকে আবার একটা ঠান্ডার ঝাঁকুনি আসছে। গরম দেশের মানুষ হলেও আমি সে ঝাঁকুনি সইতে প্রস্তত। আবার বুট জুতা পরে বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সাংবাদিকতা জীবনের কথা, বাংলাদেশের কথা ভাবার জন্য আমি প্রস্তুত। টরন্টোতে আমি যখন বরফরে উপর হাঁটব, ঢাকার বাসযাত্রীরা তখন কিছুটা ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরবেন। তবে গভীর রাতে টরন্টোর রাজপথে বরফের উপর দিয়ে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যে হেঁটে অন্যরকম স্বস্তি অনুভব করি। আমার কোনো ভয় নেই, ডর নেই, শংশয় নেই। চারপাশে মন্দ মানষ নেই। মনে হয় আমিই রাজা।

ঢাকার সাংবাদিকতা জীবনে অফিস থেকে রাতে বাসায় ফেরার সময় কতবার যে, কতরকম বিপদে পড়েছি, নিরাপদ নগরী টরেন্টোতে হাঁটতে হাঁটতে তা মনে করার চেষ্টা করি। মনে পড়ে, সাংবাদিকতা জীবনের শুরুর দিকে এক রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে সাদা পোশাকের দুজন পুলিশের কবলে পড়েছিলাম। তারা আমাকে প্রথমে চেক করলেন। না টাকা পয়সা, না কোনো কিছু, আমার কাছে কিছুই পেলেন না। সম্ভবত টাকা না পেয়ে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন তারা। এত রাতে কোত্থেকে এসেছি, কোথায় যাচ্ছি, কী করি এসব প্রশ্নের উত্তরের সময় না দিয়েই আমাকে সজোরে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বসেন একজন। হতভম্ব হয়ে গেলাম। কী অপরাধে এই আঘাত? আমার অগ্নিমূর্তি দেখে তারা দ্রুত সরে পড়েছিল। এরপর তাদের আমি বহু দিন, বহু মাস এবং বহু বছর খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে হয় জীবন বাজি রেখে। কত রকম যে হুমকি ধামকি সেখানে। রাষ্ট্রীয় এনটেলিজেন্স ফোর্সগুলো অখুশি হলে বিপদ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে তুষ্ট না রাখতে পারলে সমস্যা। সরকারের বিপক্ষে গেলে আরও বিপদ। সন্ত্রাসী, অপরাধ ও অপকর্মের বিরুদ্ধে গেলে আরেক রকম বিপদ। কত রকম ঝুঁকি। সাংবাদিক নিজে তো বটেই, এমনকি তাঁর পরিবারকেও অনেক সময় আক্রান্ত হতে হয়।

সর্বশেষ, সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণিত হয়েছেন প্রতিথযশা সাংবাদিক, ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময় সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন। দুদিনের ব্যবধানে দুজন সন্ত্রাসী তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছে। না দিলে জীবননাশের হুমকি দিয়ে রাখা হয়েছে। মগের মুল্লুক! একটি সভ্য ও উন্নত দেশ থেকে ব্যাপারটা আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। বাহ, বাংলাদেশ! এটাই কি সাংবাদিকতার পুরস্কার!

পুলিশ কি সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আদৌ আন্তরিক হবে ? সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। বরাবরই দেখেছি, পুলিশ কেন যেন সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ মনে করে। এর আগেও জনাব দোলনের উপর নানা হুমকি ধামকি এসেছে। বিপদ এসেছে। সেগুলো তিনি সামলে নিয়েছেন। তিনি যথেষ্ট সাহসী মানুষ। আশা করি, এবারও সামলে নিতে পারবেন।

কিন্তু এভাবে আর কত দিন? বাংলাদেশে নিরাপদ সাংবাদিকতা কি আদৌ সম্ভব নয়? একজন পেশাদার সম্পাদককে কত শত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রতিদিন। আরিফুর রহমান দোলন আবার শুধু সম্পাদকই নন, মালিকও। মানে তাঁর ব্যস্ততা, টেনশন অনেক বেশি। সেই ব্যস্ততা আর টেনশন আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু মন্দ মানুষ ও সন্ত্রাসী।

একজন মানুষের পক্ষে এতমুখি চাপ সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন। তাঁর জন্য শুভকামনা।

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :