বিতরণের আগে নতুন বই রাখার জায়গা সংকট

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:২৩ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:০৬

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস

নতুন বছরের শুরুতেই বিপুল শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হবে নতুন বই। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই এসব বই ছাপা শেষ করে জেলা উপজেলায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবে জেলা উপজেলা পর্যায়ে এসব বই রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। বই সংরক্ষণে নির্দিষ্ট কোনও জায়গা না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কক্ষে রাখতে হচ্ছে এসব বই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, বই ছাপিয়ে পৌঁছে দেয়া পর্যন্তই তাদের কাজ। এরপরের বিষয় তদারকির দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। অন্যদিকে বই রাখার স্থান সংকটের বিষয়ে কোনও শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে কোনও অভিযোগ পাননি বলে ভাষ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তাদের।

এক মাস পর নতুন বছরের শুরুর দিনে চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ শিক্ষার্থীর হাতে সাড়ে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি বিনামূল্যের বই তুলে দেবে সরকার। এসব বই ছাপাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ধাপে ধাপে গত আগস্ট মাস থেকে বই পাঠানো শুরু করে এনসিটিবি। এরইমধ্যে সিংহভাগ ছাপা বই পৌঁছে গেছে জেলা উপজেলা পর্যায়ে।

আগাম বই পৌঁছে যাওয়া নিঃসন্দেহে খুশির হলেও এসব বই রাখার সংকটে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। কারণ জেলা পর্যায়ে কিছু শিক্ষা অফিসে বই সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। নিজস্ব সংরক্ষণ ব্যবস্থা যাদের রয়েছে তারা বিভিন্ন বছরের উদ্বৃত্ত বই নিয়েও সমস্যায় থাকে। ফলে প্রতিবারই নতুন বই রাখা  নিয়ে জায়গা সংকটে ভোগে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সংক্ষরণের আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় ডাইনিং রুমে, কম্পিউটার ল্যাবে কিংবা লাইব্রেরি এমনকি শিক্ষকদের রুমের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে নতুন বইগুলো।

মিরপুর-১-এ ঢাকা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচতলা থেকে শুরু করে সিঁড়ির পাশ থেকে সেমিনার কক্ষসহ কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনেও স্তুপাকারে রাখা হয়েছে নতুন বই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বই রাখার জন্য আলাদা সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকলে এই অসুবিধা হতো না। এখন বইগুলো রাখার কারণে আমাদের হাঁটাচলার জন্যও জায়গা পাওয়া মুশকিল। তার সঙ্গে তো ধুলোবালি আছেই।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। আর মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত হোস্টেলের ডাইনিং কক্ষ খালি করে সেখানে রাখা হয়েছে নতুন-পুরনো বই। সংরক্ষনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পুরনো বইগুলো প্রায় নষ্ট হতে চলেছে বলে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

মোহাম্মদপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা রাজু আহমেদ ঢাকা ঢাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রায় আগস্ট মাস থেকেই বই পেতে শুরু করি। থানা পর্যায়ে নিজস্ব কোন গোডাউন না থাকায় নতুন বইগুলো আমাদের এখানে আসে। আমাদের তো বসারই সুব্যবস্থা নেই। একরুমে সবাই বসি। তার মধ্যে বিপুল পরিমাণ বইয়ের বোঝা সইবো কি করে?’

এজন্য স্কুলের পরিত্যক্ত হোস্টেলের ডাইনিং স্পেস খালি করে বইগুলো সেখানে রাখা হয়েছে জানিয়ে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন বই রাখতেই কষ্ট হচ্ছে সেখানে পুরনো বই তো রয়েছেই। এখানে একটি নতুন ভবন হচ্ছে কিন্তু সেখানে গোডাউন হচ্ছে না। যদি এখানেই শুধু বই সংরক্ষণের জন্য একটি গোডাউন থাকতো তাহলে খুবই ভালো হতো।’

মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, বাদশা ফয়সাল স্কুল এন্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরেও বই রাখার সংকটের বিষয়টি দেখা গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনওটায় শিক্ষকদের কক্ষে বা কম্পিউটার ল্যাবে নতুন বইগুলো রাখা হয়েছে।

আগামীতে নতুন বই আরও একমাস আগেই ছাপার কাজ শেষ করে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবি। তবে সরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বই ছাপিয়ে পৌঁছে দেয়া পর্যন্তই তাদের কাজ। এরপরের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেখেন বলে জানান।

অন্যদিকে মাউশিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বইয়ের সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। নতুন বই সংরক্ষণ করা নিয়ে জায়গা সংকটের বিষয়টিও মানতে রাজি নন তারা।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) ড. আবদুল মান্নান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বই সংরক্ষণ নিয়ে তো কোনও অভিযোগ নেই। খুব সমস্যাও নেই। প্রতিবারই আমরা স্কুলে বই রাখছি। সেখানকার শিক্ষকরা খুবই আনন্দের সঙ্গে বই নিচ্ছে এবং যত্নে রাখছেন।’

মাউশির কোনও স্টোরেজ ব্যবস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বইগুলো তো অল্প সময়ের জন্য রাখা হয়। সেগুলো এত সমস্যা হয় না। প্রত্যেক স্কুলে তো আমরা স্টোরেজ করতে পারবো না। এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এটা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।’

তবে এখন পর্যন্ত কোনও শিক্ষা কর্মকর্তা এ বিষয়ে অসুবিধার কথা জানাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা প্রস্তাব দিলে সেটা সরকার ভেবে দেখবে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই রাখতে স্টোরেজ করার কোনও সিদ্ধান্ত বা এ বিষয়ে কোনও পরিকল্পণার কথাও তার জানা নেই বলে জানান মাউশির এ পরিচালক।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিবছর ছেঁড়া বই বা বই ছিঁড়ে যাওয়ার অভিযোগ থাকে। যদিও পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ। এরপরও আমরা চাই একটা বই বান্ধব সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকুক।’

‘কারণ বই ছাপিয়ে পৌঁছে দেওয়ার পর নতুন বইগুলো এক থেকে দেড়মাস কোথায় রাখা হয় সেটি সংরক্ষণের জন্য কতটা উপযুক্ত সেটি দেখা দরকার। সদ্য ছাপা হওয়া বইগুলো আলোবাতাসহীন বদ্ধ ঘরে রাখা হলে বইয়ের গ্লু কতটা ঠিক থাকে সেটাও ভাবতে হবে।’ মাউশি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/ডিএম)