রাতারাতি ঘর উঠিয়ে এমপিওভুক্তির চেষ্টা!

ফরহাদ খান, নড়াইল
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০০

প্রায় দেড় মাস আগে তোলা হয়েছে একটি টিনের ঘর। তবে এখনো বেড়া দেয়া হয়নি। নেই কোনো বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র। তাই ফাঁকা ঘরের মধ্যে গরু-ছাগলের চারণভূমি। অথচ কাগজ-কলম আর সাইনবোর্ডে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৮২ সালে। এই চিত্র নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরব্রাহ্মণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার।

এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, এখানে কোনোদিন ক্লাস হয়নি। কোনো শিক্ষক-কর্মচারীদেরও দেখা মেলেনি। গত ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিভুক্তির ঘোষণা দিলে চরব্রাহ্মণডাঙ্গায় হঠাৎ করে মাদ্রাসার নামে ঘর তুলে কতিপয় ব্যক্তি ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৮২ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

চরব্রাক্ষ্মণডাঙ্গার সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম জানান, এটি নামসর্বস্ব মাদ্রাসা। এর কার্যক্রম খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরকার ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করবে এমন ঘোষণায় ফায়দা লুটতে এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ করে একটি ঘর তুলে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। আর পাশের মসজিদের জমি ব্যবহার করে মাদ্রাসাটি উঠানো হয়েছে। এমপিওভুক্তির কথা বলে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের নামে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চরব্রাক্ষণডাঙ্গার তাইজুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে একটি টিনের ঘর তুললেও নেই কোনো বেড়া। চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকারণ নেই এখানে। কখনো ক্লাস হয়নি। অথচ ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। এ বছর চরব্রাহ্মণডাঙ্গা ইবতেদায়ি মাদরাসা থেকে ১২ জন পরীক্ষার্থী লোহাগড়ার নখখালী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এসব পরীক্ষার্থীর অনেকেই দুই থেকে তিন বছর আগে ব্রাহ্মণডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে অনেকে আবার ব্রাক্ষণডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ছাত্র। ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে দুটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর তারা আর কেন্দ্রে যায়নি। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এই এবতেদায়ি মাদ্রাসার কাছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

হঠাৎ করে মাদ্রাসাটি দৃশ্যমান হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন তারা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে মাদরাসার সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকা টাইমসকে জানান, সরকার এমপিওভুক্ত ঘোষণার পর নতুন করে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ক্লাস চলবে। ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এলাকাবাসী জোর করে ১২ জনের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দুই-তিন বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, তারাই আবার মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কীভাবে অংশগ্রহণ করল? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানোন্নয়নের জন্য মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া মাদ্রাসার নামে ৩৪ শতক জমি আছে এবং এর কিছু অংশ মসজিদের জন্য রেকর্ড হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, ঘর নির্মাণসহ অন্যান্য খরচ শিক্ষকদের টাকায় করতে হচ্ছে। এখন টাকার অভাবে ঘরটি অসম্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আহাদ রেগে ওঠেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

লোহাগড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও নখখালী কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদুল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অংশগ্রহণের পর চরব্রাক্ষণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ১২ শিক্ষার্থী আর পরীক্ষায় দিতে আসেনি। আর প্রথম থেকেই একজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তবে কেন তারা অনুপস্থিত ছিল, তা জানা নেই।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, কিছুদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা এসেছে। তবে এখনো যাচাই-বাছাই চলছে। কোনো মাদ্রাসাকে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। যোগ্যতা অনুযায়ী এমপিওভুক্তির পর্যায়ে পড়লেই তাদের চূড়ান্ত করা হবে।

ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :