বিচার বিভাগ ও উন্নয়নের মুকুটহীন রানি শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৮ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:০৭

মো. তাজুল ইসলাম

আগামী ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ বিচার বিভাগীয় সম্মেলন। সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার এবং মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীসহ আরও অনেক মন্ত্রী ও সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আশায় বুক বেঁধেছেন এই ভেবে যে, তিনি বিচারকদের বিদ্যমান সমস্যা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তরায়সমূহ শুনবেন এবং সেগুলো সমাধানের ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নেবেন, যাতে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিচার বিভাগ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা যেন পূরণ হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেকোনো গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্রের জন্য অতীব জরুরি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সদ্যস্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে পায় নতুন সংবিধান। সেই সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা ছিল সুদূরপ্রসারী এবং জনগণের আশা-আকাঙক্ষা ও চাহিদার প্রতিফলন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা ও স্বপ্ন নিয়ে বিস্তারিত পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন।(https://www.dhakatimes24.com/2019/11/01/140074/বঙ্গবন্ধুর-স্বপ্ন ও বাস্তবায়ন)

বর্তমান সরকারের আমলে বিচারকদের যেসব সুবিধা প্রদান করা হয়েছে তা বলে নেওয়া ভালো। যেমন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং নির্মাণ, জেলা জজ আদালতসমূহ উর্দ্ধ সম্প্রসারণ, অতিরিক্ত জেলা জজদের সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা প্রদান, বেতনভাতা বৃদ্ধি করে জুডিসিয়াল পে স্কেল ঘোষণা, জুডিসিয়াল ভাতা প্রদান যদিও বর্তমান বেতন স্কেলে দেয়া হয়নি, প্রত্যেক বছর প্রবেশ পদে সহকারী জজ নিয়োগ দান, সুপ্রিম কোর্টের ডায়েরি ও কজলিস্ট অনলাইনে আনা, বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন আপগ্রেডেশন করার জন্য সামগ্রিক ডিজিটালাইজেশনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জুডিসিয়াল অফিসার নিয়োগ করা, জাতীয় লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমকে বেগবান করার জন্য প্রত্যেক জেলায় বিচার বিভাগের সদস্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে নিয়োগদান করা, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি জোরদার করা ইত্যাদি।

তবে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জুডিসিয়ারির জন্য যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা আশানুরুপ বাস্তবায়ন হয়েছে কি হয়নি তা বলার সময় শেষ হয়ে যায়নি। আমরা বিচারকরা আশাবাদী যে, উন্নয়নের মুকুটহীন রানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালে বিচার বিভাগের উন্নয়নে গৃহীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হবে।

বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসকে দেশের ও জনগণের সেবাদানের জন্য নিবেদিত সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নিন্মোক্ত অতি জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য সদাশয় সরকারের নিকট তথা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উন্নয়নের রূপকার মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

প্রধান ১০টি নিবেদন যেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি:

১। সহকারী/সিনিয়র সহকারী জজদের স্টেনো টাইপিস্ট; ২। যুগ্ম/ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল/অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২, ৩, ৪ আদালতের স্থায়ী কর্মচারী পদ সৃষ্টি; ৩। যুগ্ম জেলা জজ পর্যন্ত গাড়ি নগদায়ন সুবিধা নিশ্চিতকরণ (অন্যান্য সার্ভিসের সাথে মিল রেখে); ৪। প্রত্যেক আদালতের জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দকরণ; ৫। মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরি; ৬। এজলাস সংকট অতি দ্রুত সমাধান করতে হবে। সারা দেশে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং হওয়ায় এজলাস সংকট অনেকটা কমে এসেছে; ৭। দেশি-বিদেশি ট্রেনিংয়ে সকলের সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ; ৮। বিদ্যমান বেতন স্কেল অনুযায়ী ৩০ শতাংশ জুডিসিয়াল ভাতা নির্ধারণ করতে হবে; ৯। সব টায়ারে নতুন নতুন আদালত ও পদ সৃষ্টি করা যাতে বিধিমালা ও নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি হয়; ১০। ই-নামজারির ন্যায় মামলা দায়ের এর সময় ই-ফাইলিং ও রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হবে।

৬টি প্রস্তাব: স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হোক

১। বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রত্যেক জেলায় নির্ধারিত আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং ঢাকায় ডরমেটরি জাতীয় আবাসিকের ব্যবস্থা করা যাতে বিচারকরা ঢাকায় গিয়ে নির্বিঘ্নে কাজকর্ম সেরে নিতে পারে।

২। বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যত প্রয়োজন, মানোন্নয়ন, বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সার্ভিসের তুলনামূলক সুযোগ সুবিধা পর্যালোচনা এবং উপযুক্ত পরামর্শ/সুপারিশ প্রদানের জন্য সুপ্রিমকোর্ট এবং মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি গবেষণা সেল সৃষ্টি; ৩। বিচার বিভাগের সর্বত্র ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিতকরণ এবং এজন্য প্রত্যেক জেলায় একটি বিশেষায়িত আইটি সেল গঠন; ৪। কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ে মিডিয়া সেল সৃষ্টি; ৫। জেলা জজ আদালতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদায়ন। যিনি নেজারতসহ জেলা জজের অধীনে প্রশাসনিক সকল দপ্তরের এবং প্রটোকলসহ অন্যান্য কাজে নিযুক্ত থাকবেন। যার কোনো বিচারিক কাজ থাকবে না; ৬। প্রশাসন একাডেমির ন্যায় ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা।

আমরা বিচার বিভাগের সদস্য সকলেই চাই বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস দেশের সেরা সেবাদান সার্ভিস হিসেবে পরিগণিত হোক। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবি এবং আইনের পরে উচ্চতর ডিগ্রিধারী ছাত্ররা জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য। মাত্র ১৭০০ সদস্যের এই সার্ভিসকে আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি আদর্শ এবং অনুকরণীয় সার্ভিস হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এরজন্য লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।

আমাদের বিচার বিভাগের প্রতি বিরুপ আচরণ নয় বরং দেশের উন্নয়নের ভাগীদার ও অংশীদার মনে করে বিচার বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার সুদৃষ্টি দেবেন তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

চর্তুদশ শতাব্দীতে মরক্কোর অভিযাত্রিক ইবনে বতুতা ১৩৪৬ সালে যখন বাংলাদেশে ভ্রমণ করেন তখন তিনি বাংলাকে নদীর পানি বিধৌত উর্বর ভূমি বলে আখ্যা দেন এবং বলেন বাংলার অধিকাংশ জনগণ কৃষিকাজ ও কাপড় বুনন তথা তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। এটি অত্যন্ত আনন্দের এই যে, ইবনে বতুতার ৭ শত বছর পরও বাংলাদেশ আজও পূর্বের ন্যায় রয়ে গেছে এবং শুধু তাই নয় বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তৈরি পোশাক শিল্পে অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়।

বাংলাদেশের এই অর্জন বিগত দশ বছরে মিরাকল ছাড়া আর কিছুই নয় এবং সেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণ ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে এবং করছে। যেভাবে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করেছে যার অবদান শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফর্মুলা। তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৯৬-২০০১ সাল প্রথম পর্যায়ে ছিল উন্নয়নের প্রস্তুতি পর্ব। যেটি ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে এক অন্ধকার রাত্রিবেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর দুই দশকে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণ ও নিরসনের প্রথম ধাপ।

এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত) শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ধাপে গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে আবারও প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। তবে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় দফায় দেশের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। এবং পুনরায় সরকার গঠন করে জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের দলীয় ২৩ দফা ম্যানিফেস্টু ভিশন-২০২১ ঘোষণা দেন এবং দেশের উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়নে শপথ গ্রহণ করেন। বিগত ১০ বছরের অধিক এবং তৃতীয় দফায় শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশের উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় দফায় দেশের শাসনভার গ্রহণ করে (২০১৪-২০১৮) সকল বাধা বিপত্তি স্বত্তেও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখেন। ফলে হেনরি কিসিজ্ঞারের আখ্যা দেয়া ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বাংলাদেশ এখন কানায় কানায় পূর্ণ। এই লেখাটি বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার এবং কাণ্ডারি শেখ হাসিনার শাসনামলে বিগত দশকে কি কি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে তাই তুলে ধরা হবে। তাছাড়া স্বাভাবিক উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক, অবকাঠামোগত, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য উন্নয়নের চিত্র ও লেখার মধ্যে তুলে ধরা হবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে শেখ হাসিনা শুধু রাজনৈতিক নেতা নন তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বিভিন্ন সময়ে তার রাজনৈতিক সভার ভাষণে প্রত্যক্ষ করা যায়। ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণের (Separation of Power) উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা পত্রিকার ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার অংশবিশেষ এখানে উদ্ধৃত করা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আমি হাইকোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলো যাতে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমি এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত করতে চাই যে, দুর্নীতি ও কালক্ষেপণ উচ্ছেদ করার প্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থার কতকগুলো মৌলিক ত্রুটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের নীতি সূক্ষ্মভাবে পর্যলোচনা করা হবে।’

বিচার বিভাগের পৃথককরণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক আধিপত্য কমে যেতে পারে- এ আশঙ্কায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে কিছুটা গড়িমসিও দেখা যায়। যা-ই হোক, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা এবং বর্তমান সরকার ও তার আইনমন্ত্রী সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কনসেপ্টটিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সবচেয়ে বড় সামাজিক উন্নয়ন এই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতা আনা এবং দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে কলঙ্কমুক্ত করা। বিচারহীনতা রোধ করতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা ও কি দর্শন পোষণ করতেন তা সবিস্তারে এই লিংকে পাওয়া যাবে। (https://www.dhakatimes24.com/2019/11/21/142292/বিচারহীনতার-সংস্কৃতি-রোধ-বঙ্গবন্ধুর-ন্যায়বিচার-দর্শন)। এটা ছিলো সরকারের পক্ষে একটা সাহসী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত এবং বিচার প্রক্রিয়াটি নুরেমবার্গ ট্রায়াল, টোকিও ট্রায়াল এবং ম্যানিলা ট্রায়ালের সাথে সমতা বজায় রেখে করা হয়। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের একটি নতুন যুগের সুচনা হয়েছে যেখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার কখনও বাতিল হয়না। অন্যদিকে জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা সরকার সফল এবং বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক এবং কাশ্মির যেখানে উগ্রবাদী জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এবং লাগামহীন গোষ্ঠী সন্ত্রাস সেখানে মৃত্যু উপত্যকা গড়ে তুলেছে এবং বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের ভাইরাসে আক্রান্ত সেখানে শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে এবং সেই মডেল অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো জন্য অনুসরণীয় হতে পারে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় ১৯৭৩ সালে জুলি ও কুরি পদকে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী এবং তারই রাজনীতিতে বিশ্বাসী তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করেন। যার ফলে তথাকথিত পাহাড়ের শান্তি বাহিনী এবং সরকারি বাহিনীর মধ্য দীর্ঘদিনের লেগে থাকা অশান্তি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটে। শুধু তাই নয় ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি জাতীয় নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দীর্ঘদিনের সীমানা বিরোধের নিরসন করেন। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনা সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি আখ্যায়িত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১৬০ মিলিয়ন জনগণের কাছে একজন দুরদর্শী নেতা। যিনি জনগণের নিকট বাংলাদেশকে একটি অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে আবিষ্কার করেছেন। তিনি দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসেছেন এবং দেশের জনগণকে মানবসম্পদ হিসেবে পরিগণিত করেন। ভারত এবং চীনের উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হচ্ছে তাদের দেশের জনগণ। তিনি আরও উপলব্ধি করেছেন যে অধিক জনগণ বোঝা নয় এরা মানবসম্পদ। শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য ও নীতি হচ্ছে মানবসম্পদের উন্নয়ন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন। তারা আরও আশা করে, বিচার বিভাগ যাতে সামগ্রিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বদা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার সার্বিক সহযোগিতা এবং বিচার প্রশাসনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goal) অর্জনে বদ্ধপরিকর।  

সামগ্রিকভাবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের মুকুটহীন রানি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সার্বিক উন্নয়ন এনে দিচ্ছেন। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি এখন শেখ হাসিনার হাত ধরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আমাদের সকল সফলতা শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের কারণে হয়েছে। তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জনগণ এখন ও আশা করে যে, তিনি আরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এবং চলবে। বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাও সমাধান হবে। তার ধারাবাহিক নেতৃত্ব যেমন বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রয়োজন তেমনি আঞ্চলিক ও সারা বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণও প্রয়োজন। শেখ হাসিনা এখন একটি নাম নয় সারা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য অনুসরণীয় রোল মডেল।

লেখক: বিচারক, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত