অতি লোভে নষ্ট নন-ক্যাডারের চাকরিজীবী চক্রসহ ধরা

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪১ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:২০

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

বিসিএসের মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছিলেন তিনি। তবে চাকরিই তার একমাত্র কর্ম ছিল না। দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস ও অন্যের হয়ে প্রক্সি পরীক্ষাও দিতেন। পাশাপাশি গড়ে তোলেন একটি চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

মাহমুদুল হাসান আজাদ নামের ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে তার চক্রের আরও ছয় সদস্যসহ শনিবার ঢাকার লালবাগ ও কাফরুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- মোহাম্মদ নাহিদ, রাসেল আলী, রুহুল আমীন, খালেকুর রহমান টিটু, আহমেদ জুবায়ের সাইমন ও ইব্রাহিম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি অত্যাধুনিক ইলেক্টনিক্স ডিভাইস, ১৬টি মাইক্রো হেডফোন, ১৫টি মোবাইল ফোনসেট, ২৫টি সিম, বিভিন্ন পরীক্ষার পশ্নপত্র সমাধানে ব্যবহৃত চারটি বই।

রবিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে চক্রটির বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহন করবে তাদের খুঁজে বের করতে প্রথমে একটা গ্রুপ কাজ করে। বিশেষ করে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপে গ্রুপ খুলে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে কীভাবে প্রশ্নপত্র দিবে, কীভাবে পাস করিয়ে দিবে এসব নিয়ে আলোচনার শেষে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার চুক্তি করত এই চক্রটি।’

‘পরীক্ষার আগে চক্রটি জামানত হিসেবে পরীক্ষার্থীর মূল সার্টিফিকেট, মার্কসিট ও সনদপত্র নিজেদের কাছে জমা রাখে। চুক্তি অনুযায়ী ভর্তি বা চাকরি পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশের সময় কানের ভিতরে একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস দেওয়া হয়। যেটা তল্লাশি বা স্ক্যানিং করলে ধরা পড়ে না। এই ডিভাইসের সঙ্গে তাদের (পরীক্ষার্থী) শরীরে সিমযুক্ত একটি যন্ত্র লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষা শুরু পর মোবাইলে প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। এরপর চক্রের সদস্যরা প্রশ্নে উত্তরপত্র সমাধান করে। পরে কানে থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে হলে বসে থাকা পরীক্ষার্থীকে সকল উত্তর বলে দেয়।’

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর জানান, গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান আজাদ ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। এছাড়া তিনি আরেকটি জায়গায়ও চাকরি করছেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে তিনি অডিট অফিসে চাকরি করেন। কিন্তু তিনি দীর্ঘ চারবছর ধরে আজাদ প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। তার গ্রুপে আরো অনেক সদস্য রয়েছে যারা প্রশ্ন ফাঁস ও পক্সি পরীক্ষা দিতেন।

তিনি বলেন, ‘এই চক্রের একটা গ্রুপকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মাহমুদুল হাসানসহ এখন পর্যন্ত এই চক্রের সাতজনতে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। আরো কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তারে কাজ করা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া ডিভাইস কোথা থেকে কীভাবে নিয়ে আসা হয়েছে আমরা তদন্ত করছি।’

‘চক্রটি গত চার পাঁচ বছর এই কাজ করে আসছিল। এটা একটা অবৈধ চক্র। এখানে যারাই জড়িত থাকুক আমরা তাদের মুলোৎপাটন করে ছাড়বো।’

গ্রেপ্তার সাতজনকে দশদিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই সাতজনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, মোহাম্মদ নাহিদ, রাসেল আলী, রুহুল আমীনের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সিআইডি অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দিয়েছিল। তবে তখন তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার সহযোগিতায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আজাদের মতো এমন অনেক মেধাবীই অসাধুভাবে অপরাধীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের মেধাকে আর কোনও কাজে লাগাতে পারছেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেটিগেশন বিভাগের উপ কমিশনার মোদাচ্ছের হোসেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ কমিশনার রাজিব আল মাসুদ, সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী ও সহকারী কমিশনার নাজমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এসএস/ডিএম