‘দলের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলে ছাত্ররাজনীতি এগিয়ে যাবে’

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ছাত্ররাজনীতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত রেখে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই ছাত্ররাজনীতি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ছাত্রনেতারা। তারা কোনোভাবেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন। এসব নেতার পরামর্শ, ছাত্ররাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে। দলের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারলে এ দেশের ছাত্ররাজনীতি এগিয়ে যাবে।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিতে এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে। কিন্তু সবকিছু অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি। তাহলে গণজাগরণ মঞ্চ, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে শুরু করে হালের আবরার হত্যার বিচারের আন্দোলন হতো না। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি সবসময়ই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেখানে কীভাবে আবরার হত্যাকাণ্ড হলো? এটা ছাত্ররাজনীতি না থাকার কারণে হয়েছে।’

সেলিম বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না। অবারিত করে দেওয়া দরকার।’

ডাকসুর সাবেক নেতাদের নিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একটি আহ্বান জানাবো, ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএসদের এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চাই। কাউন্সিল অব এক্স ভিপি-জিএস অব ডাকসু নামে। এই আমরাই নতুনদের সামনের দিকে পথ দেখাতে পারবো সেখান থেকে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘একটি ছাত্রসংগঠনের সাংগঠনিক প্রধান কীভাবে রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারেন? এটা আমার মাথায় আসে না। দলের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারলে এই দেশের ছাত্ররাজনীতি এগিয়ে যাবে।’

জেএসডির প্রধান আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘বর্তমান সরকার নিজেদের পাপ আড়াল করতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। যাতে ছাত্ররা কথা বলতে না পারে। কিন্তু তাদের কথা বলতে হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য দেশে ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই এই দেশে স্বাধীনতা এসেছিল। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার মতো নিষ্ঠুর ও নির্মম সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি মানে জাতীয় রাজনীতির বড় জায়গা। সত্যের পক্ষে তারুণ্যকে সবসময় থাকতে হবে। সঠিক কথা বলতে হবে। খালেদা জিয়াকে যেভাবে জেলে রাখা হয়েছে, তা অন্যায়। দেশে একটা অনাচার চলছে। দেশ আজ গভীর সংকটে। এর বিরুদ্ধে কি কথা বলা যাবে না? কথা বলতে হবে।’

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করতে হবে। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতি লুটেরাদের হাতে চলে গিয়েছে। এ অবস্থা থেকে দূর করতে ঐক্য প্রয়োজন রয়েছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ঐতিহাসিক পরিবর্তন প্রয়োজন। ডাকসুর বর্তমান ভিপি নুরুল হক নুরকে বলবো, তুমি নেতৃত্ব দাও। এ দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, সাবেক ছাত্রনেতারা তোমাদের পাশে আছে। দেশ, মানুষ, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ফিরিয়ে এনে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।’

আর ডাকসুর বর্তমান ভিপি নুরুল হক নুরু বলেন, ‘নব্বইয়ের পর এ দেশে ছাত্ররাজনীতিতে কিচ্ছু হয়নি। শুধু দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়া। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে ছাত্রলীগ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে হয়ত ছাত্রদলও এমন লাগামহীন হয়ে পড়তো।’

সভাপতির বক্তব্যে সুজনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেলে, ছাত্ররাজনীতি এই কলুষতা থেকে মুক্তি পাবে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত ও আবু সাঈদ খান, শিক্ষাবার্তা সম্পাদক এ এন রাশেদা প্রমুখ।

সুজন সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন সংস্থাটির সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার শর্মা।

(ঢাকাটাইমস/০২ডিসেম্বর/বিইউ/জেবি)