সুপেয় পানি-বঞ্চিত সাতক্ষীরার ১৩ গ্রামের মানুষ

এম. বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা
 | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৬

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ৭৩১টি দলিত পরিবারের মধ্যে ৩৯০টি পরিবার পানি কিনে পান করে। বাকি ৩৪১টি পরিবার পান করে আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা। গত জুন মাস পর্যন্ত তিনটি ইউনিয়নের ৭৩১টি পরিবারই পান করত আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। দলিত নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে কর্মসূচি গ্রহণ করে। গত পাঁচ মাসে তারা এই জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ পানি পানে সচেতন করেছে। এতে অর্ধেকের বেশি মানুষ নিরাপদ পানি পান করছে বলে সংস্থাটির পক্ষে দাবি করা হয়েছে।

সংস্থার মতে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দলিত সম্প্রদায়ের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ পানি কিনে পান করে। শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ নিরাপদ পায়খানা ব্যবহার করে। ৪০ ভাগ মানুষ এখনো অনিরাপদ খোলা পায়খানা ব্যবহার করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ৯০ ভাগে আনা সম্ভব হয়েছে।

দলিত সংস্থার সাতক্ষীরা ইউনিটের অফিসার বিকাশ চন্দ্র দাশ বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কোনো গ্রামে পানির লাইন নেই। এখানে খাবার পানির একমাত্র উৎস টিউবওয়েল। একটি টিউবওয়েল থেকে প্রায় ৫-১০টি পরিবার পানি সংগ্রহ করে। ফলে তারা পানি সংকটে বেশি করে ভোগে। এই পানির অভাবে তাদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে দলিত নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। কারণ, পানি সংগ্রহের পুরো দায়িত্ব নারীর ওপর।

তিনি বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ৭৩১টি পরিবার নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত ছিল। আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দ্রিরা গোলদারপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবানীপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার নারী-শিশুরা সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবানীপাড়ার মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুগছেন নানা রোগে। এছাড়া ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া গোলদারপাড়ার পিছিয়ে পড়া মানুষ ভুগছেন নানা রোগে। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হাঁপানিসহ চর্মরোগে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় চার হাজার মানুষ ব্যবহার করেন আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা। এসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পায়খানা ব্যবহার করেন না। এক সময় খোলা আকাশের নিচে বনে-বাদাড়ে ঝোপের আড়ালে তারা মলত্যাগ করতেন। এখন সে অবস্থা না থাকলেও যে পায়খানা ব্যবহার করেন তা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। চার থেকে পাঁচটি রিং-স্লাব বসিয়ে তা বস্তা কিংবা কাপড় দিয়ে ঘিরে সেখানেই মলত্যাগ করেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। একটি পায়খানা ৩-৪টি পরিবার ব্যবহার করেন। এলাকার অধিকাংশ মানুষ অতি দরিদ্র শ্রেণির। অন্যের ক্ষেতে খামারে শ্রম বিক্রি করে সংসার চলে তাদের। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাঁশ সংগ্রহ করে ঝুড়ি ডালা বুনে অনেকেই কোনো রকমে সংসার চালান। গরিব শ্রমজীবী এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করা দুঃসাধ্য। পাকা পায়খানা নির্মাণ করার সক্ষমতা নেই তাদের।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ও বল্লী ইউনিয়নে পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে এ দুটি ইউনিয়নে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি। ফলে এখানকার পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে আর্সেনিকজনিত রোগের আশঙ্কা রয়েছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, আর্সেনিকের মাত্রা প্রতিলিটার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি হলে সে পানি পানের অযোগ্য। আর্সেনিকযুক্ত পানিকে কোনোভাবে আর্সেনিকমুক্ত করা যায় না। সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এ সমস্যা থাকায় তাদেরকে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পান করার জন্য সচেতন করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :