জুতার কাজ করেও ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চান প্রানীস
২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে দশটা। রাজধানীর সেগুনবাগিচার জাহান টাওয়ারের নিচে বসে ছেলেকে পড়ানোর পাশাপাশি জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন এক বাবা। নাম তার প্রানীস।
জুতা সেলাইয়ের মত অল্প রোজগারের কাজ করলে চোখেমুখে সোনালী স্বপ্ন প্রানীস ও তার ছেলে নক্ষত্রের। প্রানীস প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই চলে প্রানীসের সংসার।
কাজের ফাঁকে ছেলে নক্ষত্রকে পড়ালেখায় মনোযোগী করে তোলেন তিনি। ছেলেকে সময় দেন নিয়মিত। দেখভাল করেন ছেলের পড়া লেখাসহ সার্বিক বিষয়। একহাতে জুতা আরেক হাতে ছেলেকে বর্ণমালা শেখানো। এ যেন এক দায়িত্বশীল বাবা।
হাতে জুতা সেলাইয়ের সূচ চোকে মুখে ছেলে নিয়ে বড় স্বপ্ন। ছেলেকে বলে দিচ্ছেন বাংলা শব্দের বিভিন্ন বর্ণ। ছেলে বাবার কথায় সাড়া দিয়ে খাতায় সেগুলো লিখছে। স্কুল শেষ করে বাড়ি যায়নি ছেলেটি। চলে এসেছে বাবার কাছেই। বাবার জুতা মেরামতের দোকানের ওপরে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে খাতা কলম ও কাঠ পেন্সিল নিয়ে এরকম লেখা পড়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
লিখতে গিয়ে কোনো বর্ণ ভুলহলে তা বারবার দেখানোর পাশাপাশি রাবার দিয়ে মুছে দিচ্ছেন প্রানীস।
প্রানীস ২৬ বছর ধরে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন সেগুনবাগিচা এলাকাতেই। কিশোরগঞ্জের এই প্রানীস ছোট বেলা থেকেই একাজ করে সংসার চালান। থাকেন ঢাকার মিরপুরে। প্রতিদিন সকালে ছেলে নক্ষত্রকে নিয়ে আসেন কর্মস্থল সেগুনবাগিচা এলাকায়। ছেলে নক্ষত্র সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের নার্সারিতে পড়ছে। লেখাপড়ার মনোযোগী নক্ষত্র বাসা থেকে সেগুনবাগিচায় আসার পর যায় ক্লাসে। বাবা প্রানীস জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় প্রানীসের। তিনি বলেন, ‘ছেলে নক্ষত্র বড় হয়ে একজন ডাক্তার হতে চায়। মানুষের সেবা করতে চায়। কিন্তু জুতা সেলাইয়ের সামান্য ইনকাম দিয়ে ডাক্তারি পড়ানো কি সম্ভব?।
আগে লালবাগ বসবাস করলে এখান ঢাকার মিরপুরে থাকেন প্রানীস। একমাত্র ছেলে নক্ষত্রকে ঘিরেই তার স্বপ্ন।
ছেলেকে কি বানাবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রানীস বলেন, ‘আমার তো আশা পরে বাচ্চা আশা করে ডাক্তার হতে। পড়ালেখায় নিয়মিত নক্ষত্র স্কুল মিস করে না কখনো। এখন থেকেই নক্ষত্র অংক ইংরেজি বাংলা সব বিষয়েই ভালো করছে। আমার যে ইনকাম তা দিয়ে ছেলের ডাক্তারি পড়ানো কঠিন। তারপরও ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি।
সংসার কেমনে চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রানীস বলেন, ‘আছি কোনোমতে। চলে যাচ্ছে সংসার। তিনি বলেন, বাসার পড়ার সময় পায় না নক্ষত্র। তাই এখানে হাতের লেখা ও ক্লাসের পড়া মুখস্ত করে নেয়। আবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে মিরপুরের বাসায় যায় প্রানীস ও নক্ষত্র। সকালে বাসার পড়ার সময় পায় না এজন্য আমি ওকে বসিয়ে পড়াই।
ছয় বছরের নক্ষত্রের কাছে জানতে চাইলে সে বলে বড় হয়ে ডাক্তার হব। মানুষের সেবা করব।
ঢাকাটাইমস/৪ ডিসেম্বর/এআইএম