আদালত ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৫ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৯
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের শুনানি হবে আজ (বৃহস্পতিবার)। খালেদার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
যেকোনো ধরনের যেন নাশকতা রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। আদালতের আশপাশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট গেট, প্রেসক্লাবের মোড়, চাঁনখারপুল এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এসব এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কারও গতিবিধি সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হচ্ছে।
আদালতের স্টাফ ও আইনজীবীদের পরিচয়পত্র দেখে তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ। হাইকোর্টের তিনটি ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের ভেতরে আপিল বিভাগে প্রবেশের আগে দুটি গেটে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আদালত চত্বর ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে খালেদার জামিনের বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে। তবে তার আগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দেখবেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজকের কার্যতালিকায় জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের ৭ নম্বরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান।
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন আজ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
আদালতে ওইদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনও আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।
এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এএ/এমআর