ধুলাবালি থেকে বাঁচতে করণীয়

অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২০ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০৭
ফাইল ছবি

ঢাকার দূষণে যুক্ত হয়েছে আরেক বিপদ। ধুলা। রাজধানীর যেখানেই যাবেন আর কিছু পান না পান নাকে, চোখে, মুখে ধুলা আর ধোঁয়া ঠিকই পাবেন। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কিংবা রাতে কোনো সময়ই মুক্তি মিলছে না এই দুঃসহ অবস্থা থেকে। ডিসেম্বরে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যখন শীত জেঁকে বসে ধুলার দূষণ তখন বাড়তেই থাকে।

চলতি বছর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে এক নম্বরে আছে বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। সংস্থাটির গত বছরের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব পর্যবেক্ষণেও ঢাকার বায়ুদূষণের এই চিত্র উঠে আসে।

অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, তীব্র যানজট, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ভারী ধাতু ধুলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ঘরের বাইরে তো বটেই, বাড়িঘর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ও খেলার মাঠও ছেয়ে আছে ধুলায়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে নগরবাসী। বিশেষ করে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারসহ রোগবালাই।

ঢাকার সড়ক ও ঘরের ভেতর বায়ুদূষণ বিষয়ে দুটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব ঝুঁকির কথা উঠে এসেছে। গবেষণায় ঢাকার রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা ধুলায় তার চেয়ে প্রায় দুই শ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। এবং নিকেল ও সিসার মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটি ও পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের ঝুঁকি আগেই ছিল, এবার ঢাকার রাস্তার ধুলার মধ্যেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক শনাক্ত করেছে গবেষক দল। এসব ভারী ধাতুকণার আকার এতটাই সূক্ষ্ম যে, তা মানুষের চুলের চেয়ে পঁচিশ থেকে এক শ গুণ বেশি ছোট। ফলে খুব সহজেই এসব সূক্ষ্ম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু ত্বকের সংস্পর্শে আসছে। শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।

শীত মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এসব সূক্ষ্ম বস্তুকণা বাতাসে ভাসতে থাকে, যা অক্ষত অবস্থায় মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে বড় ধরনের ক্ষতি করে। এক থেকে ছয়তলা ভবনের ভেতরের বায়ুতে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা যেমনÑ পিএম ওয়ান, পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ ও পিএম টেন নিরাপদ মাত্রার থেকে অনেক বেশি, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ঘরের বাসিন্দাদের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে ঘরের ভেতরের ময়লা-আবর্জনা, ডিটারজেন্ট, রান্নার চুলা ও টয়লেট থেকেও দূষিত পদার্থ যুক্ত হচ্ছে।

বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। বিগত পাঁচ বছরে এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

* মাস্ক ব্যবহার করা।

* ব্যস্ততম সড়কে ব্যস্ত সময়ে হেঁটে যাতায়াত কম করা।

* বেশি দূষিত এলাকায় কম যাওয়া।

* রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে পানি ছিটানো।

* সকালের পরিবর্তে রাতে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা।

* নির্মাণাধীন রাস্তাঘাট, বাড়ি, উন্নয়ন কিংবা সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করা।

* কাজ চলাকালীন সময়ে পানি ছিটানো এবং ধুলাবালি যেন আশপাশের এলাকায় না ছড়ায় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

* আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।

* সচেতনতা সৃষ্টি করা।

* ঢাকাসহ সব জেলার সকলের দায়িত্ববান হওয়া এবং এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, নাক, কান, গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :