ব্যানার-ফেস্টুনে বড় নেতা হওয়া যায় না: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙিয়ে বড় নেতা হওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের নেতা টাকা দিয়ে নয়, ত্যাগ দিয়ে হতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগে কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। বেড়েছে নেতার সংখ্যা। এখন পোস্টার-বিলবোর্ড লাগাতে মানুষ ভাড়া করতে হয়। আর এখন বিলবোর্ডে সকলেই নেতা।’
পোস্টার লাগালেই বড় নেতা হওয়া যায় না উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে সম্মেলনে যারা বিশাল বিশাল বিলবোর্ড লাগিয়েছেন বা স্লোগান দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, সামনে মানুষ দেখি এক, আর বিলবোর্ডে মানুষ দেখি আরেক। আমাদের এমন নেতার দরকার নেই। আমাদের দরকার সাচ্চা নেতা, দুঃসময়ের নেতা। আমাদের ত্যাগী নেতা ও যোগ্য নেতা দরকার দরকার। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাঁচাতে হবে।’
এ সময় দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন কাদের। বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিকে কখনো জায়গা দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তাই সবাই সাবধান হয়ে যান।’
আওয়ামী লীগ সম্পাদক সিলেটের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের রেখে কোনো পকেট কমিটি হবে না। আপনারা পকেট কমিটি করা বন্ধ করুন। আওয়ামী লীগ থেকে কখনোই কাউকে বাদ দেয়া হয় না, শুধুমাত্র দায়িত্বের পরিবর্তন হয়।’
আওয়ামী লীগে মনোনয়ন বাণিজ্যের দিন শেষ উল্লেখ করে কাদের বলেন, এখন আর মনোনয়ন বাণিজ্য করা যাবে না। যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতেন তারা সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান।
পরে জেলা ও মহানগরের নেতৃত্ব নির্বাচনে তিনি নেতাকর্মীদের ২০ মিনিট সময় দেন। নিজেরা নিজেরা ঐকমতে না পৌঁছালে কেন্দ্র থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
শীর্ষ দুই পদের ৩২ প্রার্থীকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হলে তারা বিষয়টি আ.লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেন। পরে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।’
নতুন কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেট আসেন।
জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হক হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ সময় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন ওড়ানো হয়।
সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আলিয়া মাদরাসা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। বর্ণিল প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন সম্মেলনস্থল।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য সুজিত রায় নন্দী, অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ঢাকাটাইমস/০৫ডিসেম্বর/ইএস