টিসিবির পেঁয়াজেও বাজারের ভূত!

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:০৮ | প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৩১

পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবিকে দিয়ে নিত্যপণ্যটি বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। গত দুই মাস ধরে ৪৫ টাকা কেজিতে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করে আসছে। তবে সংস্থাটির ডিলাররা বরাদ্দের পেঁয়াজ তুলেও ট্রাকসেলে বিক্রি না করার অভিযোগ উঠেছে। আর সেসব পেঁয়াজ কোথায় যাচ্ছে তার কোনও সদুত্তর নেই ডিলারদের কাছে। এমতাবস্থায় টিসিবির পেঁয়াজেও বাজারের ভূত দেখছেন সাধারণ ক্রেতারা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল জরুরি ভিত্তিতে যোগান দেওয়া ও ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য টিসিবির গোড়াপত্তন। বছরজুড়ে এদের ঢিলেঢালা কার্যক্রম থাকলেও রমজানে তাদের সক্রিয়তা দেখা যায়। আর এবার বাজারে পেঁয়াজ যখন ২শ টাকা ছাড়িয়ে যায় তখন সংস্থাটি ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। তবে চাহিদার তুলনায় তা সামান্য হলেও ক্রেতারা সুলভে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে ভিড় করেন টিসিবির ট্রাকসেলে। যদিও অনেকেই পেঁয়াজ না পেয়ে ফেরত আসেন।

এর পেছনে ডিলারদের কোনও কারসাজি আছে কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন ক্রেতারা। গতকাল বরাদ্দকৃত পেঁয়াজ তুলেও বিক্রি না করে ঘরে বসে থাকা এক ডিলার ধরা পড়েছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। পরে ভোক্তা অধিকারের কাছে জরিমানাও গুনতে হয়েছে তাকে।

ডিলারদের এমন দুষ্টুকাণ্ডকে এখনই থামাতে টিসিবি কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি পুনর্র্নিবাচিত হলেন গোলাম রহমান।

ঢাকা টাইমকে তিনি বলেন, ‘ডিলারদের ওপর কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে টিসিবির কয়েক হাজার ডিলার। তার মধ্যে কিছু তো দুষ্টু লোক থাকবে। এটা আছে অস্বীকার করা যাবে না। তাই এটা যাতে না বাড়তে পারে এজন্য মনিটরিং করতে হবে। তবে আশার কথা হলো এই অপরাধীরা ধরা পড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

গত সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকে দাম কমার আশ^াস দেয়া হলেও কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। বরং দিনেদিনে বেড়ে যায় দাম। দুইশ টাকা কেজি ছাড়িয়ে প্রায় তিনশ ছুঁইছুঁই করে পেঁয়াজের কেজি। এখনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুইশো টাকার বেশি দরে।

এই অবস্থায় রাজধানীতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৫টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। শুরুতে ৩০টির মত জায়গায় বিক্রি করলেও পরে আরো ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সম্প্রতি দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরেও বিক্রি শুরু হয়েছে ৪৫টাকা কেজির পেঁয়াজ। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

রাজধানীতে টিসিবির নির্ধারিত ডিলাররা সকালে তেজগাঁও থেকে ট্রাকে করে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে পরে তা বিক্রি শুরু করেন। গতকাল মোহাম্মদপুরের আদাবর-মনসুরাবাদ এলাকার ডিলার কামরুল হাসান ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ তুললেও তা বিক্রি না করে বাসায় বসে থাকেন।

এতে বিপাকে পড়েন ওই এলাকার সাধারণ ক্রেতারা। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কামরুলের সন্ধানে বের হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সাধারণত সকাল থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। কিন্তু ডিলার কামরুল দিনভর বিক্রি না করায় অধিদপ্তরের নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। একইসঙ্গে টিসিবির পেঁয়াজ যথাযথভাবে ভোক্তাদের কাছে সরবারহ না করায় তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল খবর পেয়ে মোবাইলে ডিলার কামরুলকে ডেকে এনে পিঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য করেন।

এদিকে চট্টগ্রামে টিসিবির পেঁয়াজ নিয়ে ঘটেছে অন্য ঘটনা। টিসিবি থেকে নেয়া ১৭৬ কেজি পেঁয়াজ খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে ডিলার দোলন বড়ুয়াসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতের এজলাস কক্ষে জব্দ সেই পেঁয়াজ নিলামে বিক্রি করা হয়। টিসিবির নির্ধারিত দর থেকে ৪৬ টাকা বেশি দামে প্রতিকেজি ৯১ টাকা দরে একজন পেঁয়াজগুলো কিনে নেন। পেঁয়াজগুলো সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কিনেছেন নগরীর এক ব্যবসায়ী। আটককৃত চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারলেও নগরবাসী এর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ প্রায়ই টিসিবির ট্রাক থেকে পচা পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় টিসিবির পেঁয়াজ কেনার পর প্রতিক্রিয়ায় সাইদুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘কয়েকঘণ্টা দাঁড়িয়ে ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনলাম। বড় বড় সাইজের এসব পেঁয়াজের মধ্যে অনেক পচা থাকে। কি করবো এগুলো নিতেই আমরা বাধ্য।’

এদিকে টিসিবির ডিলারের লোকজন বলছেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। কারণ তারা বস্তায় করে পেঁয়াজ গুদাম থেকে নিয়ে আসেন। ভালো, পচা যা থাকে আমাদের তাই তাদের ধরিয়ে দেয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৬ডিসম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :