১১ ডিসেম্বর সম্মেলন

২৬ বছরের ধারাবাহিকতা নাকি কেন্দ্রের কমিটি হবিগঞ্জ আ.লীগে?

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৩

পাবেল খান চৌধুরী, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে কাউন্সিলে নির্বাচন, না কেন্দ্রের কমিটি আসছে- এ নিয়ে জোর আলোচনা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে গত ২৬ বছরে যে চারটি কাউন্সিল হয়েছে হবিগঞ্জ আওয়ামী লেিগর, তাতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও এই ধারাবাহিকতা রক্ষা হোক চান অনেক নেতা।

তবে কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রের কমিটি হলে বহাল থাকবেন বর্তমান নেতারা। অনেকের ধারণা, ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে শীর্ষ দুই পদসহ অধিকাংশ পদে। আসতে পারে নতুনদের দিয়ে কমিটি। 

দলের সিংহভাগ নেতাকর্মীর ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির এবারও স্বপদে থাকছেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা আবু জাহিরের অনেকটা একক নেতৃত্বে কোনো ধরনের গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব ছাড়া সাংগঠনিক কাজ চলছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের। 

প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নির্বাচনী এলাকা বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে দলীয় কোন্দল ও একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তবে সম্মেলনের আগে তা মিটিয়ে আনতে কাজ করছেন তিনি। 

দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। এই সম্মেলন ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

এর বিপরীত চিত্র পদধারী ও পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে। তারা ভুগছেন শঙ্কা আর আশা-নিরাশার দোলাচলে। কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কান্ডারি। নাকি স্বপদেই বহাল থাকছেন বর্তমান কমিটির শীর্ষ দুই পদধারী। 

শেষ পর্যন্ত এই সম্মেলনে নতুন নেতা বাছাইয়ে সমঝোতায়, ভোটের মাধ্যমে, নাকি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় নেতা নির্বাচিত হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এখনো। 

আগামী বুধবার সকাল ১০টায় শহরের কোর্ট প্রাঙ্গণের নিমতলায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, কার্যকরী কমিটির সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি, কার্যকরী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, অধ্যাপক রফিকুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ও হবিগঞ্জ-১ নবীবগঞ্জ বাহুবল আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ।

এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারী নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার-পোস্টার, বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে শহরের প্রতিটি অলি-গলিতে। শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মীদের ছবি। সম্মেলন সফল করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলার ৯টি উপজেলা ও পৌর এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।  
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা জানান,  সম্মেলন সফল করতে তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে শীর্ষ দুই পদে কাউন্সিল ভোটে নাকি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় হবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা নেই কারও। 

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে জেলা জুড়ে।

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল সামনে রেখে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৮টি পদে মোট ২৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সভাপতি পদে ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে সর্বাধিক ১৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন লড়বেন বলে জানা গেছে।

সভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মো. আবু জাহির, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে আলী।

সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, বর্তমান সহ-সভাপতি ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী, সাবেক প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আবু বকর ছিদ্দিকী, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চান জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মর্তুজা হাসান, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মাধবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মর্তুজ আলী, বর্তমান প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, বর্তমান দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাস সুমন, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা শহীদ রানা, অ্যাডভোকেট মো. আবুল আজাদ, মাহবুব আলম মালু ও অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর পুত্র অ্যাডভোটে ফয়জুল বশীর চৌধুরী সুজন, জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরি কমিটির বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট মোন্তাকিম চৌধুরী খোকন ও বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মক্রমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আহাদ মিয়া।

এবারের সম্মেলনে ৯টি উপজেলা ও একটি পৌরসভার (হবিগঞ্জ পৌরসভা) প্রায় সাড়ে ৩০০ কাউন্সিলার/ডেলিগেট ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে এখনো তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপি বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। বিগত ২৬ বছরে হবিগঞ্জে যে ৪টি সম্মেলন হয়েছে, সব কটিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়েছে। আমরা অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাউন্সিলরের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে তবে কাউন্সিল নাকি কেন্দ্র থেকে কমিটি দেয়া হবে, এ ব্যাপারে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে আসছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। যেখান থেকেই নেতৃত্ব আসুক তা মেনে নেব আমরা।’

(ঢাকাটাইমস/৮ডিসেম্বর/মোআ)