শিক্ষকদের কাছে কোচিং করলেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির চান্স!

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:১৭

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় ও গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য উপজেলার সরকারি উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মিলেছে। আর তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ুয়াদের মধ্যেই ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। এতে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০ ডিসেম্বর একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জেলার সবকটি সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। রাতে রেজাল্ট দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন শিক্ষকরা। এজন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শিক্ষার্থীদের তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে জেলাপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নিতে হবে।

বাস্তবে এর সবগুলো নিয়মই ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন সরকারি সবগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সর্বোচ্চ ১০ জনের কথা বলা থাকলেও পড়ানো হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ জন শিক্ষার্থীকে, তালিকা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জমা দেননি কোন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পড়ানো বাবদ নেয়া হচ্ছে দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আগে যেসব শিক্ষার্থীরা সরকারি বিদ্যালয়ের এসব শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েন তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় ভর্তি পরীক্ষায়। আর তাই অভিভাবকরা সেসব শিক্ষকদের কাছেই সন্তানদের প্রাইভেট পড়ান। গত ২৪ নভেম্বর শেষ হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন জেলা ও উপজেলার সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এ কে এম আজাদ, মাইদুল ইসলাম, মোখলেছুর রহমান, সাদাত রিয়াদ আরিফ, নুর মোহাম্মদ হাবিবুল্লা, ও এ. বি. এম মোস্তফা কামালসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিগত বছরগুলোতে তারা যে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিগত সালের পরীক্ষাগুলোতে তারা দেখেছেন কি ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়। সেই ধারণা থেকে এখন শিক্ষার্থীদের পড়ান এসব শিক্ষকরা। আর তাই তাদের কাছে যেসব শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণের শতকরা হারও বেশি।

তাদের মধ্যে এক শিক্ষক বলেন, এর আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যে ১০ জনকে পড়িয়েছিলেন তাদের ৮ জনই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শিক্ষকরা নিজেদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন না, তারা প্রশ্ন তৈরির সাথেও তারা জড়িত নন, আর নিজেদের বিদ্যালয়ের খাতা দেখে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে না বলেও জানান এসব শিক্ষকরা।

গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন সে বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানা বানু বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের না পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রতিবছরই নোটিশ দেয়া হয়। তারপরও নিয়ম অমান্য করে তারা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।

সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াসমিন আরা হক বলেন, এমন ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তাই কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। কেউ অভিযোগ দিলে বা কোন সংবাদ প্রকাশিত হলে সেই পত্রিকা আমাদের দিলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর কবির বলেন, পরীক্ষার আগে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে জড়িত না। তাই আমরা যে পদ্ধতিতে পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করব তাতে করে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। প্রকৃতই যারা মেধাবী তারা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি আমাদের জানা আছে। দেখছি, এ বিষয়ে কি করা যায়।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এলএ)