প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাত্রলীগ নেতা রিমনের চিঠি

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:২২ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৫

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিজ দলেরই সাবেক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) মো. আবু তাহের (রিমন)।

তাহের দাবি করেন, গত বছরের অক্টোবরে একই কলেজের সাবেক জিএস মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ কলেজছাত্র সংসদে পদবঞ্চিত হওয়ায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কলেজ থেকে পুলিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ফাঁসিয়েছেন।

মামলার জন্য প্রতিমাসে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ছাত্রত্ব খোয়াতে বসা এই ছাত্রনেতা সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া ওই চিঠিতে আবু তাহের রিমন লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সাথে মো. রিয়াজ উদ্দিনের রাজনৈতিক বিরোধ। তিনি প্রভাব খাটিয়ে আধিপত্য বজায় রাখতে নিজের সিন্ডিকেটের লোকজনকে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদে রাখতে চেয়েছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় কলেজের শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে বর্জন করে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস থাকতে না পেরে ২০১৭ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিভিন্ন সময় নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। মাননীয় নেত্রী, রিয়াজ উদ্দিন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে কিছু ভূঁইফোড় নিউজ পোর্টালে টাকার লেনদেনের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করাতে শুরু করে।’

চিঠির শেষের দিকে রিমন লেখেন, ‘মমতাময়ী নেত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক আপনি। তাই আপনার কাছে আকুল আবেদন, আপনি আমার আশ্রয়স্থল। অকালে আমার বাবাকে হারিয়েছি। মো. রিয়াজ উদ্দিনের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং সামাজিকভাবে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বাঁচতে আপনার কাছে ন্যায়বিচার ও অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ প্রদানে একান্ত মর্জি কামনা করছি।’

খোলা চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তাহের রিমন বলেন, ‘আমরা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি। রাজনীতি করতে এসেছি বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে। কিন্তু রাজনীতি করতে এসে যখন নিজেই মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলাম তখন বুঝেছি কি কারণে বঙ্গবন্ধু তেইশ বছর জেলে কাটিয়েছেন।’

মাদক মামলার বিষয় জানতে চাইলে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমাকে কলেজ থেকে ডেকে নিয়ে যায় ওয়ারী থানার এক পুলিশ সদস্য। পরে জোর করে পুলিশ ভ্যানে তোলে। আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে থানাহাজতে আটকে রাখে। আমি আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে জানতে পারি আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’

রিমন বলেন, ‘আমার মতো একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তানের রাজনীতি করার কোনো সাধ্য নেই। শুধু জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক বলেই সেন্ট্রাল ল’ কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাকে বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত করেছেন।’

কে বা কারা আপনাকে ফাঁসিয়েছে এই প্রশ্নে রিমন বলেন, ‘আমার আগে হোমিও কলেজের জিএস ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। আমিও জিএস পদে প্রার্থিতা করলে তার সঙ্গে শত্রুতা শুরু হয়। পরবর্তীতে সাধারণ ছাত্রদের ম্যান্ডেটে আমি নির্বাচিত হলে, তিনি ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পদ না পেয়ে আমার পেছনে লাগেন।

রিমনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতকর্মী হিসেবে রিমনের বেশ সুনাম আছে। রিমন সেন্ট্রাল ল’ কলেজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছে। কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে সে জড়াতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি যতদূর জানি সে সততার সঙ্গে রাজনীতি করে।’

অন্যদিকে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সালেহা খাতুন একটি প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে রিমনের বিষয়ে জানান। সেখানে তিনি লিখেন, মো. আবু তাহের (রিমন) উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং কোনো প্রকার রাষ্ট্রবিরোধী, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ‘আমি রিমনকে বহুদিন ধরে জানি ও চিনি। সে ছাত্রলীগের রাজনীতির একজন নিবেদিতকর্মী। তার নৈতিক স্থলন হতে পারে আমি বিশ্বাস করি না। সে অনুপ্রবেশকারী বা সুবিধাবাদী নয়, ত্যাগী ছাত্রনেতা। আমি যতদূর জানি পারিবারিকভাবেই রিমনের বাবাও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ ছিলেন।’

রিমনের অভিযোগের বিষয়ে হোমিও কলেজের সাবেক জিএস মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসানোর কেউ না। আর অন্য একজনকে ফাঁসিয়ে আমার লাভ কী?’ নিজেকে সাপ্তাহিক ক্রাইম জগতের প্রকাশক ও সম্পাদক দাবি করে তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন রিয়াজ। পরে এই প্রতিবেদককে বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সাবেক সহ-সভাপতি।’

জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের মামলা। আমার এই মুহূর্তে কিছু মনে নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বরাবর রিমনের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি জানালে ওসি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার ও প্রতিকার চাইলে তিনি অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/এসআর/এমআর