যুদ্ধাপরাধের দায়ে টিপু সুলতানের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৫ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানের ফাঁসির রায় এসেছে যুদ্ধাপরাধ আদালতে।

বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৪১তম রায় ঘোষণা করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি বুধবার রায়ের জন্য রাখে।

প্রসিকিউশন ও আসমিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটিতে শুনানি করেন মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও জাহিদ ইমাম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে করা মামলাটিতে ছয়জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, আটক, অপহরণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৭ সালের ২ মে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে গত বছর ২৭ মার্চ টিপুর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল।

রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দু'জনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালপত্র লুট করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে পাওয়া যায়। তবে ছয়জনের মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আবদুর রশিদ সরকার, মুসা ও আবুল হোসেন আগেই মারা যান। বেঁচে আছেন একমাত্র টিপু সুলতান।

গত বছর ২৯ মে প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে ৮ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে টিপুর বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

কে এই টিপু সুলতান

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের স্থানীয় কর্মী ছিলেন টিপু সুলতান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রসংঘের নাম বদলে হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতেও যুক্ত হন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে লেখাপড়া করা টিপু সুলতান ১৯৮৪ সালে নাটোরের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। ২০১১ সালে সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বলছে, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে স্থানীয় যে রাজাকাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে টিপু সুলতানই বেঁচে আছেন। একাত্তরের ভূমিকার জন্য রাজশাহীর অনেকে চেনে তাকে ‘টিপু রাজাকার’ নামেই চেনেন।

১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তিনি ছাড়া পেয়ে যান। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

টিপু সুলতানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪১টি রায় ঘোষণা করা হলো।

এর রায়ের আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে ৪০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতে সাতটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

এর মধ্যে ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের প্রাক্তন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রাক্তন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের প্রাক্তন নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।

এছাড়া জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। গত ৩১ অক্টোবর তার আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

আজহারুলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আপিলের রায় হাতে পেলে তার রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করবেন। এর আগে আজহারকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছিল। আরো বেশকটি মামলা আপিলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব আপিল মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে বলে জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ।

ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/এমআর