ঢাকা ব্যাংকের ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ

সাইমেক্স লেদারের এমডি ও তার স্ত্রীর জামিন বাতিল

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ভুয়া এলসির মধ্যেমে ঢাকা ব্যাংকের ২১ কোটি টাকার অধিক আত্মসাতের মামলায় সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব (টিএস আইয়ুব) ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তানিয়া রহমানের জামিন বাতিল করেছে রিভিশনাল আদালত।

বুধবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) শেখ হাফিজুর রহমান সিএমএম আদালতে দেওয়া জামিন বাতিল করে আসামিদের ৭ কার্য দিবসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।

রায়ে আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে সিএমএম আদালতকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বলে নির্দেশ নিয়েছেন আদালত।

২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় জামিন বাতিল হওয়া দুই আসামিসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের ওই মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।

মামলায় চলতি বছর ২১ মার্চ টিএস আইয়ুব ও তানিয়া রহমান সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদ আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।

সিএমএম আদালতের ওই জামিন মঞ্জুর আদেশ বাতিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করেন। রিভিশন মামলার শুনানি শেষে বুধবার রায় ঘোষণায় জামিন বাতিল করা হয়। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম মামলাটি পরিচালনা করেন।

জামিন বাতিলের আদেশে বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের বয়স্ক ও অসুস্থতা এবং মহিলা বিবেচনায় জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় আসামিদের বয়স মামলার এহাজারে উল্লেখ নেই এবং আসামিদের দাখিল করা কাগজপত্রের বয়স পাওয়া যায় না। এছাড়া আসামিরা যে জটিল রোগে আক্রান্ত এ সংক্রান্তে কোনো মেডিকেল ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি। আর মামলাটি মানিলন্ডারিং আইন, দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা এবং আসামিরাই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে ২১ কোটি টাকার অধিক আত্মসাতের অভিযোগ। এছাড়া এ মামলার সহ-আসামি মেসার্স সাদাত এন্টার প্রাইজের মালিক আমিনুল ইসলাম গত ১৪ মে হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন পেয়ে গত ৩ জুলাই মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে অভিযোগের গুরুত্ব, অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি, বিচারিক মনোভাব, যুক্তিযুক্ততা, বিচারপ্রার্থী তথা সমাজের মনোভাব ও একই ধরনের মামলায় প্রথাগত বা চলমান সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা।

তাই অপরাধের গুরুত্ব ও সহ আসামিরা কারাগারে থাকা এবং আসামিরা জামিনে থাকলে তদন্ত প্রভাব বিস্তারের সম্ভবনা থাকায় আসামির জামিন বিবেচনাযোগ্য না হওয়ায় গত ২১ মার্চের ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জামিন আদেশ বাতিল করা হলো।

মামলায় অভিযোগ, আসামি টিএস আইয়ুব ও তানিয়া রহমান ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখায় একটি হিসাব খুলে ৩ জন বিদেশি বায়ারের নামে ১৯টি এলসি দাখিল করেন। এরপর অপর আসামিদের যোসাজসে ভুয়া বিল অব এক্সর্পোট, বিল অব লেডিংসহ পণ্য শিপমেন্ট রেকর্ডপত্র তৈরি করে ৫৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৫ ডলারের ২৬টি এক্সর্পোট বিল ২০১৭ সালের ৫ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটিতে দাখিল করেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা সঠিকভাবে যাচাই না করেই ১৭টি বিল ক্রয়ের অনুমতি দিয়ে টিএস আইয়ুব ও তানিয়া রহমানের হিসাবে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ৯৮ হাজার ১২৬ টাকা ট্রান্সফার করেন। ওই ১৭টি বিলের মধ্যে ৪টি বাবদ ৫ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার ৭০৮ টাকা ৫০ পয়সা ব্যাংকে জমা হলেও ১৪টি বিলের ২১ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৪১৭ টাকা ৫০ পয়সা আসামিরা পরষ্পর যোগসাজসে আত্মসাৎ করেন।

ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/ইএস