টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে উচ্ছ্বসিত শহীদের স্বজনরা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৩৯

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজশাহীর আবদুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে খুশি হয়েছেন শহীদের স্বজনরা। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহীতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন তারা।

রায় ঘোষণা হবে, এ খবর আগেই পেয়েছিলেন শহীদ পরিরারের সন্তানেরা। তাই বুধবার সকাল ১০টা থেকেই তারা নগরীর তালইমারী শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। ছিলেন মামলার সাক্ষীরাও। এরপর রায় ঘোষণা হলে শহীদের স্বজনরা আনন্দিত হন, তারা উচ্ছাস প্রকাশ করেন। তবে এই উচ্ছ্বাসের মাঝেও স্বজন হারানোর বেদনায় আরো একবার ব্যথিত হন তারা। এখন টিপু রাজাকারের রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় সেই দাবিও সরকারের কাছে জানান শহীদের স্বজনেরা।

সকাল থেকেই শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান করছিলেন শহীদ বাবর মন্ডলের ছেলে শাহ্ জামান। রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ে আমি খুব খুশি। একাত্তরে ২৬ সেপ্টেম্বর আমার বাবাকে রাজশাহীর জিরোপয়েন্ট থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর টিপু রাজাকার ধরে নিয়ে যায়। আমরা জানতে পারি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে তাকে রাখা হয়েছে। আমরা জোহা হলে যাই, কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারপর জানতে পারি, বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কুখ্যাত এই রাজাকারের ফাঁসিতে আমরা খুশি।

শহীদ চাঁন মোহাম্মদের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এটি একটি প্রত্যাশিত রায়। আমার বাবাকে একাত্তরের ১ নভেম্বর টিপুসহ ১০ জন রাজাকার ৩০-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে এসে ধরে নিয়ে যায়। আমরা ছাদ থেকে দেখতে পাই, বাবাকে ধরে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। ট্রাকে বাবা ছাড়াও আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের সবাইকেই হত্যা করা হয়।

শহীদ পরিবারের আরেক সদস্য শহীদ সইজুদ্দিন শেখের ছেলে হাসানুজ্জামান হাসানী বলেন, ১৩ এপ্রিল আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এরপর বাবা ও আমার মামাকে ধরে নিয়ে যায়। এর পরের দিন বাড়ির পাশেই আমরা বাবার লাশ পাই। এই রায়ে আমি খুব খুশি। এখন দ্রুত যেন কার্যকর হয়।

শহীদ পরিবারের আরেক সদস্য মফিজুর রহমান নবী বলেন, আমার শ্বশুরকে ২৬ সেপ্টেম্বর টিপুসহ আরো ৮-১০ জন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা সাহেববাজার থেকে ধরে শামসুজ্জোহা হলে নিয়ে যায়। সারারাত নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়। পরে হলের বাইরে এক গর্তে লাশ মাটিচাপা দেয়। আমি এই রায়ে খুব সন্তুষ্ট।

এছাড়াও শহীদ পরিবারের আরো যেসব সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান বলেন, সে সময় প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো টিপু রাজাকার ও তার দলবল। তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ছিল। সেখানে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডে আমরা খুশি। এখন গ্রামগঞ্জে আরও যে রাজাকার আছে তাদেরও বিচারের দাবি জানাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল থেকে বেঁচে ফিরেছেন তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। তিনি বলেন, রাজশাহীর চিহ্নিত রাজাকার টিপু। সে যুদ্ধের সময় বিভিন্ন পরিবারের ওপর হামলা, নির্যাতন, লুটপাট ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মুলহোতা ছিল। এই রাজাকারের ফাঁসিতে রাজশাহী অনেকটা কলঙ্কমুক্ত হলো। অতিদ্রুত এই রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী ছিলেন টিপু সুলতান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন গণহত্যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রসংঘের নাম বদলে হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতেও যুক্ত হন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে লেখাপড়া করা টিপু সুলতান ১৯৮৪ সালে নাটোরের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে।

এরপর ২০১১ সালে সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় নগরীর মতিহার থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :