খালেদার জামিন শুনানি ঘিরে আদালতে কড়া নিরাপত্তা

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৬ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জামিন শুনানির আগে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসানো হয়েছে আটটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হবে। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বিএনপি প্রধানের সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে দাখিল করে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। তবে প্রতিবেদনে কী আছে, তা জানা যায়নি।

জামিন শুনানির আবেদনটি আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে আজকের কার্যতালিকায় ১২ নম্বরে রাখা হয়েছে।

শুনানিকে কেন্দ্র করে পুরো সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপিল বিভাগের এজলাসকক্ষে আটটি সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

গতকাল বিকাল তিনটা থেকে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে পৃথক তিনটি গেটে তল্লাশি করে সব গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়।

শুনানিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যর উপস্থিতি দেখা যায়। গতরাত থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের তিনটি ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ দেখা গেছে। আদালত ভবনের প্রবেশপথে বসানো রয়েছে আর্চওয়ে।

গত ৫ ডিসেম্বর চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন ধার্যকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিক্ষোভ ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শুনানির দিন এগোনো এবং ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন শ্লোগানে বিক্ষোভ করেন।

এজলাস কক্ষে বিক্ষোভের ঘটনাকে ওই সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, আপনারা (বিএনপিন্থী আইনজীবী) কি আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। ওই হট্টগোল ও বিক্ষোভের ঘটনায় সরকার ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করেন।

সেই প্রেক্ষাপটে আজ জামিন শুনানিকে ঘিরে সরকার ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নিজেদের অবস্থানকে জানান দিতেই আপিল বিভাগে জমায়েত হবেন। নিজ নিজ সংগঠনের আইনজীবীরা তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে এই জমায়েতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে নিজ নিজ সংগঠনের আইনজীবীদের আপিল বিভাগে থাকতে বলা হয়েছে। আইনজীবী জমায়েতের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আপিল বিভাগে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না শর্তে ডিএমপির এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে ঘিরে সুপ্রিম কোর্টে নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা থাকছে। গতরাত থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের তিনটি ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আদালত ভবনে প্রবেশপথে বসানো রয়েছে আর্চওয়ে। কার্ড দেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়েই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নজরদারি করছে। যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এছাড়া গতকালই প্রধানবিচারপতির এজলাসের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।

ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/এসএস/এমআর