টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাজারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

পরে মওলানা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন। এসময় রেজিস্ট্রার, ডিন, ও শিক্ষক কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একে একে মওলানা ভাসানীর পরিবারবর্গ, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এই মহান নেতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

১৮৮০ সালের এ দিনে সিরাজগঞ্জের ধানঘড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান নেতা। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে চারটি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।

পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্মপ্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব¡ নেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসলামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় ‘ভাসানীর মওলানা’। এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।

১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। ১৯৩৭ সালে মওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে যোগ দেন মুসলিম লীগে। মওলানা ভাসানী ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।

২৫ মার্চের রাতে সন্তোষে তার বাড়িতেই করছিলেন মওলানা ভাসানী। পাকিস্তানি বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মওলানা ভাসানী একটি বিবৃতি দেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মে যুক্ত ছিলেন। আসামে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এ রাজনীতিবিদ।

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/এলএ)