বিএআরসির এক চেয়ারে এত মধু!

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:২৫

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ কৃষি ফাউন্ডেশনের (বিএআরসি) নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর। চলতি মাসের ২৯ তারিখ এই পদে তার মেয়াদ শেষ। তবে তিনি পদটি রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য উচ্চপর্যায়ে দেনদরবারের পাশাপাশি বিএআরসির চেয়ারম্যানের কাছেও আবেদন করেছেন। যদিও তাকে যথাসময়ে পদটি ছাড়তে বলেছেন বিএআরসির চেয়ারম্যান।

এ ছাড়া ওয়ায়েস কবীরের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, অসাধু ব্যক্তিদের নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি ও অবৈধভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একারণে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরাসহ সবস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে। এসব অভিযোগ জানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের কাছে চিঠিও দিয়েছেন।

এদিকে গত ১৯ নভেম্বর বিএআরসি চেয়ারম্যান ড. কবীর ইকরামুল হক একটি চিঠির মাধ্যমে ড. ওয়ায়েস কবীরকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বলেছেন। অন্যদিকে পদ টিকিয়ে রাখতে কোনও তদবির করছেন না বলে দাবি করেছেন ওয়ায়েস কবীর। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোও অস্বীকার করে এই প্রতিবেদককে তা তদন্ত করার অনুরোধ করেন তিনি।

কৃষিমন্ত্রীর কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএআরসি নির্বাহী পরিচালক ওয়ায়েস কবীর পদে বহাল থাকতে ফন্দিফিকির করছেন। তিনি গত ১৭ অক্টোবর বিএআরসির কেজিএফ ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কবীর ইকরামুল হকের নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লেটার অব নেগোশিয়েন দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ওয়ায়েস কবীর তার লেটার অবনেগোশিয়েনে লিখেছেন, তাকে আগে তিন বছর এবং পরে আবারও তিন বছরের জন্য আবারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের স্বাক্ষরিত তার অ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাকে মাত্র তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।

অর্থাৎ তিনি পরের যে তিন বছরের নিয়োগের কথা বলেছেন সেটা জালিয়াতি এবং মিথ্যাচার। এজন্য তার নিয়োগের ফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার বলেও কৃষিমন্ত্রীর কাছে আবেদনে উল্লেখ করেছেন তারা।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ওয়ায়েস কবীর ২০১০ সালের পারসোনাল পলিসিকে হাইলাইট করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অফিস পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা কোনও আইন নয়। ২০১২ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত ইজিএমএ ৬১ ও ৬২ নম্বর ক্লজে যে সংশোধীন আনা হয়েছে, তাতে যা কিছু হবে তা ৬৫ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে।

এই নিয়ম মেনেই অতীতে যারা কেজিএফএ চাকরি করেছেন তারা অবসর নিয়েছেন। আগে অনেকে চেষ্টা তদবির করেও চাকরিতে থাকতে পারেননি। এই আইনে ২০১৫ সালের ৩০ তম বোর্ড মিটিং যা ২০১২ সালের ৪ মে অনুষ্ঠিত হয়। তখন বিএআরসি’র কেজিএফের চেয়ারম্যান ছিলেন ওয়ায়েস কবীর। ওই বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬৫ বছরের চাকরির তালিকা তৈরি করা হয়। যেখানে ওয়ায়েস কবীরও স্বাক্ষর করেছিলেন।

কৃষিমন্ত্রীর কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ওয়ায়েস কবীর কেজিএফ বোর্ডের সহযোগিতায় কেজিএফ একটি গঠনমূলক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর পরিচিত বিস্তারে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহন করেছেন এটা ভুয়া তথ্য। তিনি বোর্ডের কিছু সদস্য বিশেষ করে আবদুস সাত্তার মণ্ডল, আবদুল কাদের, আবুল কালাম আজাদের মত অসাধু ব্যক্তিদের নিয়ে একটি চক্র তৈরি করেছেন। বিভিন্নভাবে ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বিএইউয়ের মুরগি প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আরও ৩৫ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। আইআরআরআইয়ের একটি প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। অথচ এই প্রকল্পে নিয়মানুযায়ী কোনো ব্রেকআপ গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়াও ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে শিশুক নামে একটি প্রকল্পকে কোটি কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে ওই চিঠিতে।

ওয়ায়েস কবীরের আগের পরিচালক দুই দফায় আট বছর (২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করেছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী ৬৫ বছর বয়সেই তিনি অবসর নিয়েছেন।

পদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ায়েস কবীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো চেষ্টাই করি নাই। আমার আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ আছে। তারপরেও কর্তৃপক্ষ যদি বলে আগামীকালও চলে যেতে পারি।’

ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা যে কথা বলা হচ্ছে, তা ভালোমতো তদন্ত করে দেখুন। আমার ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করুন। অফিসের তথ্য উপাত্ত তদন্ত করে দেখুন।’

অন্যদিকে ওয়ায়েস কবীরের বিষয়ে জানতে বিএআরসি’র চেয়ারম্যান ড. কবীর ইকরামুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এএ/ডিএম)