শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ের ভাঙনে ঘরবাড়ি-কৃষিজমি বিলীন

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:১১

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় গড়াই নদীতে অসময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এই ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গাছপালা, বসত-ভিটা কৃষিজমি, জনবহুল পাকা সড়ক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

শনিবার রেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিবছর নদীর পানি বৃদ্ধি এবং হ্রাসের সময় উপজেলার জঙ্গল ও নারুয়া ইউনিয়নের গড়াই নদীর তীরবর্তী ১৩টি গ্রামের বাসিন্দারা ভাঙনে প্রতিনিয়ত সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে থাকছেন। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে স্বল্প পরিমাণে সিসি ব্লক বসানো হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। সিসি ব্লকগুলো এরই মধ্যে ভেঙে নদীতে চলে গেছে। স্থানীয়দের দাবি গড়াই নদীর পারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বেড়িবাঁধ রয়েছে। তা সং¯কারে অভাবে অনেক অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বর্ষা এলেই কিছু বস্তা ফেলার কাজ করে ক্ষ্যান্ত দেয়। তারা বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে শুষ্ক মৌসুমে এ বাঁধের কোনো কাজ করে না। স্থানীয়দের দাবি শুষ্ক মওসুমে বেড়িবাঁধটির নদীর অংশে সিসি ব্লক দিয়ে সংস্কার করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। তবে বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বালিয়াকান্দির ওই দুইটি ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে ১৩টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে সর্বস্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে গড়াই নদীর বাঁধ রক্ষায় জরুরিভাবে ৫২লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। সেখানে ৫০হাজার বালিবর্তি জিও ব্যাগ ফেলা ও সিসি ব্লক ফেলে সংস্কার করা হয়

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত তিন বছরে গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এবং পানি কমে যাওয়ার সময় ভাঙনের কবলে পড়ে নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা, কোনাগ্রাম, জামসাপুর, বাকসাডাঙ্গী, নারুয়া, সোনাকান্দর ও জঙ্গল ইউনিয়নের পোটরা, আখপোটরা, পুষআমলা, বিজয়নগর, সমাধিনগর, হাবাসপুর, বাঙ্গরদাহ ও তারালিয়া গ্রামের সহশ্রাধিক বসতবাড়ি,প্রায় পাঁচ শত হেক্টর ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু মূল্যবান গাছগাছালি গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় ২০-৩০টি বসতবাড়ি। এরই মধ্যে নদীর কূল থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে গেছে আরো প্রায় ৫০০ পরিবার। অনেকেই বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে যেতে যাচ্ছেন না। গড়াই নদীতীরবর্তী জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামের কুমারেশ, নিমাই ও মাখন বাড়ই বলেন, প্রতি বছরই গড়াই নদীর ভাঙনে জঙ্গল ইউনিয়নের বিজয়নগর, পোটরা, আখপোটরা, পুষআমলা, সমাধিনগর, হাবাসপুর, বাঙ্গরদাহ, তারালিয়া গ্রামের ফসলি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নদীর কূল থেকে সরে যাওয়া কালীপদ বিশ্বাস বলেন, রাতের অন্ধকারে নদীর মধ্যে সব ঘরবাড়ি ভেঙে চলে গেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে তাই অন্যত্র চলে গিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙনে এলাকার কৃষিজমি প্রতি বছরই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফলে কৃষক নিজ নামীয় জমি হারিয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাছাড়া হঠাৎ্ করে নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী পাড়ের বসতভিটাগুলো চোখের সামনে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/ইএস