দেহমন

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে যা করবেন

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০৬

ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব

হাঁপানি রোগ খুবই কষ্টদায়ক। এ রোগে কাশির সঙ্গে খুব বেশি শ্বাসকষ্ট হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে ভোগান্তির শেষ থাকে না। হাঁপানি রোগের কারণ জেনে তার থেকে দূরে থাকলেই অনেকটা রোগ নিরাময় করা সম্ভব। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক হাঁপানি কী? এটি কেন হয়? এ রোগ থেকে বাঁচার উপায়। এসব নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব।

হাঁপানি রোগটি হলো এলার্জিক ডিসঅর্ডার। হাঁপানি হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে কয়েকটি কারণে হাঁপানি হয়ে থাকে। যেমন জন্মগত অর্থাৎ পরিবারের যদি কারো থাকে তাহলে ৫০ ভাগ চান্স রয়েছে হাঁপানি রোগ হওয়ার। পরিবেশগত কিছু কারণেও হয়ে থাকে। আবার শিশু বয়সে ভাইরাস ইনফেকশন। এটিও একটি কারণ। ভাইরাসের ইনফেকশন যদি ছোটবেলায় হয়, তাহলে তাদের পরবর্তী সময়ে হাঁপানি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা বেড়ে যায়। এছাড়া ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের হাঁপানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ছোটবেলায় পুষ্টির সঠিক চাহিদা পূরণ না হলে তাদের ক্ষেত্রে হাঁপানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

হাঁপানির লক্ষণ
হাঁপানি রোগীর কাশি শীতকালে বেশি হবে এবং গরমকালে কম হবে। সকাল এবং সন্ধ্যায় কাশি বেশি হবে। তাদের শ্বাসকষ্ট খুব বেশি হবে। শ্বাস টানতে এবং ছাড়তে খুব কষ্ট পাবে। এছাড়া তাদের শরীরে চুলকানি (ডামাটাইটিস) হয়। এটা এলার্জিক ডিসঅর্ডার। নাকের মধ্যে পলিপ হয়। এই পলিপ জমার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। যদি কারো হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট, প্রচ- কাশি হয় তাহলেই বুঝবেন রোগী হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এসময় রোগীর গা নীল (সায়ানোসিস) হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হলো, রক্তে অক্সিজেন কমে যাওয়া। নাকের ঠিক মাঝখানটা, কানের লতি এবং জিহ্বা যদি স্বাভাবিক রঙের তুলনায় কালচে হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে এটি একিউট সিভিআর অ্যাজমা। রোগীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। আগে হাঁপানি আছে, রোগী জানে না। এ ক্ষেত্রে রোগীর যদি কিছুদিন পরপর শ্বাসকষ্ট এবং কাশির কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় তাহলে ডাক্তার স্পাইরোমেট্রি (ফুসফুসের কার্যক্ষমতা) পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবে।

পার্থক্য আছে এলার্জি আর হাঁপানিতে
এলার্জি এবং হাঁপানির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমনÑ কোনো বিষয়ে শরীরের সংবেদনশীলতা বেশি থাকে। এলার্জি বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। কারও চোখে এলার্জি (কঙ্কজাংটিভাইটিস) হয়। বসন্তের সময় বাতাসে প্রচুর ফুলের রেণু থাকে। এই রেণুর কারণে এলার্জি হতে পারে। এলার্জির কারণে নাক দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। এছাড়া গায়ে চুলকানি (এলার্জি ডার্মাটাইটিস), শরীরে লাল লাল গোল হয়ে ফুলে যাবে। এটাকে আমরা আরটিকেরিয়া বলি। এলার্জি কোনো রোগ নয়। এটি একটি ফ্যানোমেনা। এলার্জির মাধ্যমে বোঝা যায় কি প্রক্রিয়ায় রোগটি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক রোগ হয়, তার একটি রোগ হচ্ছে হাঁপানি।

সতর্ক হতে হবে এলার্জির বিষয়ে
হাঁপানি রোগে যিনি ভুগছেন, তাকে বুঝতে হবে কোন জিনিসে তার এলার্জি আছে। কারও ফুলের রেণুতে এলার্জি হয়। কারও ঘরের ধুলায়, কার্পেটের নিচে, পর্দায়, চেয়ারের নিচে, তোষকের নিচে, বালিশের কভার পরিষ্কার করার সময় এলার্জি হয়। মাইট নামক এক প্রকার পোকার কারণে এটি হয়ে থাকে। মাইট খালি চোখে দেখা যায় না। ঠান্ডায় কিংবা খাবারেও অনেকের এলার্জি থাকে। কারও সিনথেটিক কাপড়ে এলার্জি হয়ে থাকে। ঘড়ি পরলে কারও ঘড়ির নিচের চামড়ায় এলার্জি হতে পারে। অর্থাৎ যে জিনিসে এলার্জি থাকবে, সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। অর্থাৎ রোগীকে সচেতন করতে হবে।

নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ
চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানি কম থাকে। হাঁপানি রোগীকে বাসায় নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে। অ্যাজমার প্রবণতা যদি বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) হাঁপানি চিকিৎসার পদ্ধতিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। স্টেপ ওয়ান, স্টেপ টু, স্টেপ থ্রি, স্টেপ ফোর এবং স্টেপ ফাইভ। আবার স্টেপ থ্রির মধ্যে দুটি ভাগ করা হয়েছে ৩-এ, ৩-বি। স্টেপ ওয়ানে ইনহেলার দেওয়া হয়। অর্থাৎ শ্বাসনালীকে সংকুচিত হওয়া থেকে বাড়িয়ে দেয়। স্টেপ ওয়ান কাজ না করলে টু-ফাইভ পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে হাঁপানি যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তখন ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যখন থেকে রোগ ধরা পড়বে তখন থেকেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তবে হাঁপানি রোগ হলে সারা জীবন চিকিৎসা করতে হয়। হাঁপানি একটি ক্রনিক ডিজিজ। হাঁপানি রোগ একেবারে ভালো করা যায় না। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

[email protected]

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এজেড)