একটা মাত্র জলরেখায় বেঁচে আছে শিবসা নদী

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২৪ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২৫

ইমদাদুল হক, পাইকগাছা (খুলনা)

দখলের কারণে একটা নদীর কী অবস্থা হতে পারে তার জলজ্যন্ত প্রমাণ শিবসা নদী। মরতে মরতে একটি মাত্র জলরেখায় কোনোভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে নদীটি। খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার কোল ঘেঁষে নদীটি এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে পলিতে। আর এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে নদীর বিস্তীর্ণ জমি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাইকগাছায় পৌরসভার কোল ঘেঁষে প্রবাহিত শিবসা নদী। বর্ষার সময়ে অল্প বৃষ্টিতেই এই নদীর পানি দুকুল উপচায়। তলিয়ে যায় পৌর সদর। কারণ পলি জমে মৃত্যুর কিনারে পৌঁছেছে নদীটি। আর শুষ্ক মৌসুমে পলিঢাকা জীর্ণ শরীর ফুটে উঠেছে। নদীটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

তারা বলছেন, মাত্র কয়েক বছর পূর্বেও এই নদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমারে করে দক্ষিণ এলাকার লোকজন খুলনা জেলা সদরে যাতায়াত করত। পাইকগাছা বাজারের পাশে ছিল বিআইডব্লিউটিএর ঘাট। প্রতিদিন কয়েকটি লঞ্চ ভিড়ত ঘাটে। লোকজনসহ ব্যবসায়িক মালপত্র ওঠানামা করত। আর পৌরসভার ৩ দিকে ছিল ৩টি খেয়াঘাট। হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হতো খেয়া নৌকায়।

কিন্তু বর্তমানে নদীটি পলি জমে একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। লঞ্চ, স্টিমার দূরের কথা নৌকা চলতে দুরূহ হয়ে পড়েছে। নদীর তলদেশের তুলনায় পৌর সদর ও নদীর দক্ষিণ পাশের সোলাদানা ও লস্কর ইউনিয়নের স্থল ভূমি অনেক নিচু হয়ে গেছে। ফলে পৌর সদরসহ এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলেছে। নদী ভরাট হওয়ার কারণেই সামান্য জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলে বাজার তলিয়ে যায়। আর বৃষ্টি হলে পৌর সদরসহ আশপাশের এলাকা অধিকাংশ সময় তলিয়ে থাকে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না হওয়ায় পলি জমে দু’ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ জন্মে বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শিববাটী ব্রিজ হতে পৌর সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিবসা নদী হাঁড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পলি জমে চরাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর ফলে খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে লোকজন হেটেই নদী পার হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে খনন করা না হলে অচিরেই নদীটি হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। নদীটি খনন করে পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

নদীটি পলি জমে ভরাট হওয়ায় এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা একেরপর এক নদীটি দখল করে নিচ্ছে। খননপূর্বক নদীটি রক্ষার জন্য আঞ্চলিক পানি কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চলেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন জানান, পাইকগাছার শিববাটি ব্রিজ হতে হাঁড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার খননের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও একনেকে প্রস্তাবনাটি উঠেনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যত দ্রুতসম্ভব কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই নদী খননের আবেদনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একনেকে পাশ করে নদী খননের কার্যক্রম যেন দ্রুত করা সম্ভব হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম)