শীতে রোগবালাই ও প্রতিকার

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫২ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৮

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

কাল থেকে শুরু হচ্ছে পৌষ মাস। ঢাকায় এখনো শীতভাব ততটা অনুভূত না হলেও, গ্রামে এখন বেশ ঠান্ডা। গরমের তুলনায় শীত আরামদায়ক হলেও প্রতিবছর এ সময়ে বেশ কিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই সময়টা বেশ জটিলতা তৈরি করে।

শীতকালে কী ধরণের সমস্যা দেখা যায় আর তা সামলাতে কী করা উচিত?

যেসব রোগব্যাধি হতে পারে

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত বলেন, শীতের এই সময়টায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলোই বেশি দেখা যায়। যেমন কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এ সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক সময়ে সনাক্ত করা না গেলে সেটা অনেক সময় নিউমোনিয়াতেও রূপ নিতে পারে।

ঠাণ্ডার কারণে অনেকের টনসিল বেড়ে গিয়ে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।

শীতকালে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় অনেক স্থানে মশার প্রকোপও বাড়ে।

ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ হলেও এখন শীতকালেও এটির বিস্তার দেখা যায়।

তাই মশার কামড়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসা, বারবার জ্বর আসা, গিঁটে ব্যথা ইত্যাদির লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কুসুম গরম পানির ব্যবহার

চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত বলেন, `গরম শেষ হলে শীত শুরু হওয়ার সময় আবহাওয়ার যে পরিবর্তন ঘটে, তাতে অনেকে শরীর চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের জ্বর হয়ে থাকে।`

শীত শুরু থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত হালকা কুসুম গরম পানিতে গোছল বা হাতমুখ ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।

পাতলা পায়খানা

'হঠাৎ করে ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের, অনেক সময় বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ে, তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে।' বলছেন চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত।

এই সমস্যা এড়াতে তিনি বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া, খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। বয়স্ক ও শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি সবসময় হাতমোজা ও মোজা পরে থাকার পরামর্শ দেন।

চামড়ার শুষ্ক হয়ে ওঠা

হাসিনাতুন জান্নাত বলছেন, ''শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বকও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অনেক সময় অ্যালার্জির কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি হয়।

এটি সামলাতে নিয়মিতভাবে ভাবে লোশন বা অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে চামড়া স্বাভাবিক থাকবে।''

ধুলাবালি থেকে সতর্কতা

শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকার মতো বড় শহরে বাতাসে নানা ধরণের ধাতুর পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এ থেকে বাঁচতে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এরকম চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হলে চুলকানি বা অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

ত্বকের বিশেষ সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা উচিত, তিনি বলছেন।

ডায়াবেটিক ও ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা

যাদের ডায়াবেটিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, শীত তাদের জন্য বিশেষ সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ এই সময়ে তাদের জটিলতা আরো বেশি করে দেয়া যায়। অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রার মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

এজন্য এই রোগীদের এই সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন মিজ জান্নাত। তাহলে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসক তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।

যা এড়িয়ে চলতে হবে

মেডিসিন চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত শিশু বা বয়স্ক থেকে শুরু করে সবাইকে শীতের সময় কয়েকটি বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে।

প্রথমত, শীতের ঠাণ্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। গরম কাপড় পড়তে হবে, কান ও হাত ঠেকে রাখতে হবে, গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে।

ঠাণ্ডা একেবারে এড়িয়ে চলতে চলতে হবে। গোসল বা হাতমুখ ধোয়া থেকে শুরু করে সবসময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। খাবার পানির ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খেতে পারলে ভালো। এ সময় ঠাণ্ডা খাবার, যেমন আইসক্রিম, কোক ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরে ধোঁয়া বা ধুলা এড়িয়ে চলার সমস্যা মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রয়োজনে ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।

যা করা উচিত

শীতের সময়েও প্রচুর পানি খাওয়া উচিত বলে বলছেন চিকিৎসক হাসিনাতুন জান্নাত। এছাড়া ভিটামিন সি রয়েছে এমন খাবার যেমন জলপাই, কমলা, লেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো একপ্রকার প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।

শিশুরা অনেক সময় শরীরে গরম কাপড় রাখে না বা খুলে ফেলে। তাই তাদের দিকে সতর্ক নজর রাখা উচিত।

শীতকালেও নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এজেড)