হেটমায়ার-হোপের সেঞ্চুরিতে ভারতকে হারাল ক্যারিবীয়রা

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৪৫

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

শিমরন হেটমায়ারের পর সেঞ্চুরি করলেন শাই হোপও। দু’জনের সেঞ্চুরির সুবাদে রবিবার ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ১৩ বল বাকি থাকতে আট উইকেটে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।

ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নায়ক অবশ্যই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার। ৮৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতরান পূর্ণ করেন তিনি। তিন নম্বরে নেমে ১০৬ বলে ১৩৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে যখন ফেরেন, তখন জেতার জন্য ৬৮ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ৫৯ রান এবং হাতে আট উইকেট। দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন তিনি। বাকি কাজটা অনায়াসে সারলেন হোপ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন।

হেটমায়ার-হোপের দাপটেই ২৮৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ৪৭.৫ ওভারে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২৯১-২)। হোপ অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে। সঙ্গে থাকেন নিকোলাস পুরান (অপরাজিত ২৯)।

দীপক চহারের বলে সুনীল অ্যামব্রিস (৯) এলবিডব্লিউ হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে শাই হোপের সঙ্গে হেটমায়ার যোগ করেছিলেন ২১৮ রান। এই জুটিই ভারতের জয়ের আশায় জল ঢালে। অবশ্য হেটমায়ারের ক্যাচ পড়েছিল। মিসফিল্ড, ওভারথ্রো— সবই হল। কিন্তু হেটমায়ারের ইনিংসের ঔজ্জ্বল্য তাতে ফিকে হয়নি। তাঁর হাফ সেঞ্চুরি এসেছিল ৫০ বলে। পঞ্চাশ পেরনোর পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ১১টি চার ও সাতটি ছয়। তুলনায় মন্থর গতিতে ব্যাট করলেন ওপেনার হোপ। তাঁর পঞ্চাশ আসে ৯২ বলে। শতরান আসে ১৪৯ বলে। ১৫১ বলে তাঁর ১০২ রানের ইনিংসে আছে সাতটি চার ও একটি ছয়।

এই ম্যাচ প্রশ্ন তুলে দিল ভারতের পঞ্চম বোলার নিয়েও। শিবম দুবে ও কেদার যাদব, দু’জনকে মিলিয়ে দশ ওভার করাতে হিমশিম খেয়েছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত শুধু একজন বোলার কমেই খেলেনি, একজন উইকেট নেওয়ার মতো বোলারেরই অভাব ছিল প্রথম এগারোয়!

তার আগে ভারত অবশ্য লড়াই করার মতোই রান তুলেছিল। ৫০ ওভারে বিরাট কোহলির দল করেছিল ৮ উইকেটে ২৮৭ রান। ইনিংসের শুরুতেই রথী-মহারথীদের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। শ্রেয়াস আইয়ার ও রিশাব পান্ত অনন্ত চাপ থেকে বের করে আনেন দলকে। 

চিপকে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড। তাঁর এই সিদ্ধান্তে অবাকই হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

বল গড়াতেই বোঝা গিয়েছিল ভারতকে কেন ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। চিপকের উইকেটে বল পড়ে মন্থর গতিতে ব্যাটে আসছিল। টাইমিং করতে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। লোকেশ রাহুল (৬) ও কোহলিকে (৪) শুরুতেই তুলে নিয়ে কটরেল ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন দিনটা হবে রোহিত শর্মার। দ্রুত  দুটো উইকেট চলে যাওয়ায় ‘হিটম্যান’ও অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে যান। চেনা মেজাজে ধরা দেননি রোহিত। ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়ার পরে ফিরে গেলেন তিনি। ভারতীয় ব্যাটিং তখন ধুঁকছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে যে রকম আগ্রাসী ক্রিকেট দেখা গিয়েছিল, তা উধাহওই থাকল এদিন।

এই অবস্থায় ভারতীয় ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার ও রিশাব পান্ত। দুই তরুণ ক্রিকেটারের জন্য সাজানোই ছিল মঞ্চ। এরকম পরিস্থিতিতেই তো নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে হয়। শ্রেয়াস ও পান্ত তাই করলেন। ১১৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন চতুর্থ উইকেটে। অবশ্য ৫৬ রানে পান্তের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন কটরেল। কিন্তু এর সুযোগ নিতে পারেননি ভারতের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। যে সময়ে তিনি ও শ্রেয়াস আইয়ার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতেন বলে ধরা হচ্ছিল, ঠিক তখনই শ্রেয়াস (৭০) ও পান্ত (৭১) ভুল শট খেলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন। ফলে, ৩০০ টপকে যাওয়ার স্বপ্নে দাঁড়ি পড়েছিল তখনই।

বিশ্বকাপের পরে আর ভারতের জার্সিতে ওয়ানডে খেলতে দেখা যায়নি কেদার যাদবকে। মিডল অর্ডার শক্তিশালী করার জন্যই তাঁকে এদিন নামিয়েছিলেন কোহলি। ৩৫ বলে ৪০ রান করেন তিনি। তবে শেষের দিকে রান তোলার গতি বাড়াতে পারেননি বাকিরা। ফলে ভারতকে ৫০ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে থামতে হয়েছিল ২৮৭ রানে। ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান শিমরন হেটমায়ার।

(ঢাকাটাইমস/১৫ ডিসেম্বর/এসইউএল)