মহান বিজয় দিবস আজ

বিজয় নিশান উড়ছে ওই

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০৩ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বছরের আর সব দিনের মতো নয় আজকের সকাল। আজ পুব আকাশে উদিত রবির কিরণ বাংলাদেশের সবুজ পথেঘাটে যে পরশ বুলিয়ে গেছে তা বিজয়ের আবহে রঙিন। এই বিজয় তেজোদ্দীপ্ত; আরও উজ্জ্বল আরও বেশি সম্ভাবনার। এই বিজয়ের মহত্ত্ব- দেশের মানুষকে একাত্ম করেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ সোনার বাংলা গড়ার এক অভিন্ন মনষ্কামে।

এমন স্বপ্ন নিয়েই জাতি আজ মেতে উঠবে ৪৯তম মহান জাতীয় দিবসে। দিনটি বাঙালির জন্য মহান। গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির। রাজধানীসহ দেশের সব শহর-বন্দরের অলিগলি থেকে গ্রামগঞ্জের মেঠোপথে গত রাত থেকেই বেজে চলেছে বিজয়ের গান। দেশপ্রেমী মানুষের হৃদয়ের গহিনে উচ্চারিত হচ্ছে কবির পঙ্ক্তি ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/খুশির হাওয়ায় ওই উড়ছে/বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই ঝরছে।’

৪৮ বছর আগে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দিনে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল একটি দেশের। বাংলাদেশ নামের সেই দেশটি দিনে দিনে বিশ^-আসরে ঠাঁই করে নিয়েছে সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে। তাই আজকের দিন বাঙালি জাতির জীবনে মহা-আনন্দের দিন। এমন একটি দিনের প্রতীক্ষায় হাজারও বছর কেটেছিল বাঙালির। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসরদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে সেই দিনটিই ছিনিয়ে এনেছিল জাতির সূর্যসন্তানরা।

আজ তাই বিজয়ের দিনে মুক্তির জয়গানে মুখর বাঙালি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির সেইসব শ্রেষ্ঠ সন্তান ও অকুতোভয় বীর ও মা-বোনকে। আজ মুখে-মুখে ফিরবে চেতনাকে শানিত করার গান। সমসুরে সকলে গাইবে ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না/আমি গাইব গাইব, বিজয়েরই গান/ওরা আসবে, চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।’

ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ আজ সারা দেশে স্মৃতির মিনারগুলো শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। গতরাত থেকেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে মিছিলের স্রোত চলেছে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পানে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে জাতি গাইবে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে/আমার হৃদয় রেখে যেতে চায় তাদের স্মৃতির চরণে...।’

স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে স্মরণ করছে। ঢাকার ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে তার প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে প্রবীণের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মানুষও শ্রদ্ধা জানাবে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারেও শ্রদ্ধা জানাতে ছুটবেন লাখো মানুষ।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এতে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটির দিন। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি ভবনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। এ ছাড়া হাতে হাতে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা। সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেতারাও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপরই স্মৃতিসৌধে নামে স্বাধীনতাপ্রিয় জনতার ঢল।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ প্রধান সরকারি ভবন, প্রতিষ্ঠানে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সব মিলিয়ে বর্ণিল বিজয় দিবস উদযাপন করছে বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র সমর্পণ করে। সেইদিনে তারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল অকুতোভয় বীর বাঙালির সামনে। পরাজয়-সনদে স্বাক্ষর করে হার মেনেছিল। গৌরবের ও আনন্দের এই বিজয় অর্জনে ঝরেছে এক সাগর রক্ত। সম্ভ্রম গেছে লাখ লাখ মা-বোনের। আনন্দের পাশাপাশি তাই এদিন বাঙালির মনে বিষাদও থাকবে অনেক ব্যথা আর কষ্টের।

স্বাধীনতার এই অর্ধশতকে দুর্বার গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে মধ্য-আয়ের দেশের মর্যাদায় সমাসীন হয়েছি আমরা। রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেদের অর্থে তরতর করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প। এতে করে বিশ্ববাসীর কাছে এই খবর পৌঁছেছে যে বাংলাদেশ সক্ষম- সেই সক্ষমতা দেখিয়েছে দেশটি। আজ বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকেও পেছনে ফেলেছে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম-শহরের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে এনেছে।

বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি: মহান বিজয় দিবসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বিজয় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ডিসেম্বর/ডিএম)